৫টি ধাপে পারফেক্ট বেইজ মেকআপ করবেন কিভাবে আজ তা আপনাদের জানাবো। তার পূর্বে বলে নেই, বলুন দেখি ঢাকার নামি দামী পার্লারে একটা পার্টি মেকআপ নেওয়ার খরচ কেমন? সবচেয়ে হাল্কা সাজ শুরু হয় ১০০০ থেকে, মোটামুটি মনমতো সাজ নেওয়া যায় কম হলেও ২৫০০-৩০০০ টাকা। এবার বলুন একটা পার্টিতে সাজতে যদি খরচ হয় ৩০০০ টাকা কম বেশি, সেটা বহন করার সামর্থ্য কতো জনের আছে বা সামর্থ্য থাকলেও এই খরচের জাস্টিফিকেশন কী? আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো সাহস করে উঠতে পারি না একটা পার্টির জন্য ৩০০০ টাকা দিয়ে মেকআপ নেওয়ার। তাই নিজের মেকআপটা বরাবরই নিজেই করার অভ্যাস আমার। আমি মনে করি বেইজ মেকআপ করাটা একটা সুন্দর গেটআপ মেকআপের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বেইজ মেকআপ। বেশ অনেকদিন ধরে নিজে "trial and error" পদ্ধতির পর আমি ৫টি ধাপে পারফেক্ট বেইজ মেকআপের শুরু থেকে শেষ তা এই আর্টিকেলে জানাবো।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী তৈলাক্ত বা সেনসিটিভ, ড্রাই অথবা কম্বাইন্ড হলে, ফেইসে ব্রণের দাগ হলে সবসময় মেকআপের ব্যাপারে একটু সাবধান থাকতে হয়। জমকালো পার্টি মেকআপের বেইজ দুইভাবে করা যায়, এক হচ্ছে– ফাউন্ডেশন, ফেইস পাউডার ইউজ করে, আর নয়তো প্যানকেক ব্যবহার করে। আমি দুই পদ্ধতির কথাই লিখবো, যার যেমন ভালো লাগে সেভাবে করবেন। তবে বলে রাখি প্যানকেক স্কিনের জন্য খুবই খারাপ। যত কম ব্যবহার করবেন ততো ভালো বা ব্যবহার না করলেই ভালো। কিন্তু ধরেন মাসে একবার বা দুইবার ইউজ করলেন, তাতে সমস্যা হবে না।
পূর্বপ্রস্তুতিঃ পার্টিমেকআপের বেইজ করতে বসার আগে লক্ষ করুন দিনের পার্টি না, রাতের পার্টি, ওয়েদার কেমন এই বিষয়গুলো। যদি দিনের পার্টি হয় তাহলে বেইজটা করতে হবে হালকা এবং ন্যাচারাল। আর রাতের পার্টি হলে একটু ভারি বেইজ এতে লাইটিং-এ ছবি ভালো আসবে। বেইজ করার আগে মুখে একটা উপটান লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এবার বরফ ঘষে নিন ১০ মিনিট। হয়ে গেলে ড্রাই স্কিনের জন্য ময়েশ্চারাইজ করে নিন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যদি ওয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার থাকে তাহলে তা দিয়ে নিন হালকা করে।
৫টি ধাপে পারফেক্ট বেইজ মেকআপ করতে যা যা লাগবে-
• ফেইস প্রাইমার
• ফাউন্ডেশন/প্যানকেক
• কনসিলার
• ফেইস পাউডার
• মেকাপ সেটিং স্প্রে
• ফেইস ব্রাশ/স্পঞ্জ
৫টি ধাপে পারফেক্ট বেইজ মেকআপ-
১) ফেইস প্রাইমার আঙ্গুলের মাথায় নিয়ে মুখে অল ওভার আলতো করে লাগাতে হবে। প্রাইমার সুন্দর করে ব্লেন্ড করে নিলে বেইজ অনেক smooth হবে। প্রাইমারের পরিমাণ বেশি হলে কিন্তু মুখ ওয়েলি লাগবে। আবার কম হলেও কাজ দিবে না সঠিক পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে।
২) প্রাইমার দেওয়ার পর মিনিট দশেক অপেক্ষা করুন। প্রাইমারটা ফেইসে বসে গেলে, তারপর মুখে গাঢ় কোন দাগ থাকলে কনসিলার দিয়ে হালকা করে কভার করে নিতে হবে। আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে প্রেস করে দাগের উপর বসিয়ে দিতে হবে।
খেয়াল রাখুন কনসিলার ব্লেন্ড করবেন না। তাতে করে দাগ না ঢেকে মেসি হয়ে যাবে। তাই এমনভাবে কনসিলার লাগাতে হবে যাতে শুধু দাগটাকে কভার করে আর স্কিনের মতই ন্যাচারাল লাগে। শুধুমাত্র গাঢ় দাগ থাকলে কনসিলিং করবেন, দাগ হালকা হলে ফাউন্ডেশনের পর কনসিলিং করতে হবে।
৩) এবার ফাউন্ডেশন দিতে হবে। অথবা লিকুইড ফাউন্ডেশনে সমস্যা থাকলে প্যানকেক ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি প্যানস্টিক ও একই কাজ দিবে।
ফাউন্ডেশন যদি ভারি হয় যেমন রেভলন কালার স্টেট বিউটি ব্লেন্ডার বা স্পঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন। বিউটি ব্লেন্ডার পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত পানি ফেলে দিয়ে তাতে ফাউন্ডেশন নিয়ে মুখে ব্লেন্ড করতে হয়। আবার হাল্কা ধরনের ফাউন্ডেশনের জন্য ফেইস ব্রাশ করা যায়। অনেকে আবার আঙ্গুল দিয়ে ব্লেন্ড করতেই পছন্দ করেন। তবে পরিষ্কার ব্রাশ বা স্পঞ্জ ব্যবহার করা উচিত।
প্যানকেক ব্যবহার করতে চাইলে আপনার শেড মিলিয়ে দুইটি প্যানকেক কিনে নিন। চাইলে একটা দিয়েও করতে পারেন। ভালো স্পঞ্জ কিনে নিন আগেই। স্পঞ্জ ভিজিয়ে বাড়তি পানি ফেলে দিয়ে তারপর স্পঞ্জ-এ প্যানকেক লাগিয়ে আস্তে আস্তে বেইজ তৈরি করেন। বার বার স্পঞ্জ ভিজিয়ে ব্লেন্ড করুন। ত্বকের উপর স্পঞ্জ না ঘষে বরং ছোট ছোট স্ট্রোকে ফেইস কভার করুন। চাইলে প্রথমে হলুদ একটা শেড দিয়ে এক লেয়ার করে তার উপর ন্যাচারাল শেড দিয়ে বেইজ করতে পারেন বা দুই শেড মিশিয়েও করতে পারেন।
৪) ফাউন্ডেশন বা প্যানকেক দিয়ে বেইজ হয়ে গেলে এবার যদি মেকআপ সেটিং স্প্রে দিয়ে স্প্রে করতে হবে এই বেইজের উপরে। অনেকে ফেইস পাউডার দিয়ে বেইজ সেট করার পরেও দিয়ে থাকে। এমনকি আপনি স্প্রে ফাউন্ডেশন দেওয়ার আগে ফাউন্ডেশনের মধ্যেও স্প্রে করে নিতে পারেন। মেকআপ সেটিং স্প্রে না থাকলে স্প্রে বোতলে পানি নিয়ে তাও হালকা স্প্রে করে দিতে পারেন, এতে করে মেকআপের স্থায়িত্ব বেশি না হলেও এয়ার ব্রাশড টাইপ একটা ব্যাপার আনতে পারবেন।
৫) এবার ফাউন্ডেশন বা প্যানকেকের বেইজটা ফেইস পাউডার দিয়ে সেট করে নিতে হবে। আপনি যদি ফেইস পাউডারের সাথে দেওয়া স্পঞ্জ ব্যবহার করতে চান সেই ক্ষেত্রে শুধু হাল্কা করে ট্যাপ করে করে পাউডার দিয়ে সেট করুন। স্পঞ্জ দিয়ে ফেইস পাউডার যদি ব্লেন্ড করতে যান ফাউন্ডেশনের উপর তাহলে কিন্তু ফাউন্ডেশনের বেইজ নষ্ট হয়ে যাবে।
ফেইস পাউডার-এর বদলে বা ফেইস পাউডার-এর উপরে HD setting powder ব্যবহার করতে পারেন। ব্রাশের মাথায় সামান্য পাউডার নিয়ে হালকা করে বুলিয়ে নিন। ব্যস হয়ে গেল আপনার বেইজ।
এই তো জেনে গেলেন ৫টি ধাপে পারফেক্ট বেইজ মেকআপ করার দুটি পদ্ধতি-ই। আজকে এই পর্যন্তই। শুভকামনা রইলো সবার জন্য!