চার কমিশনের প্রতিবেদন: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদসহ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ
ঢাকা প্রেস নিউজ
চারটি সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন জমা দিতে যাচ্ছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনও আগামী বুধবার (১৫ জানুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবে নিম্নকক্ষে ৪০০টি আসনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে ১০০টি আসন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। উচ্চকক্ষে থাকবে ১০৫টি আসন, যা আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবে। দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট আসন হবে ৫০৫টি।
এছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির পাশাপাশি আরও কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর করার প্রস্তাব দিচ্ছে। এছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য আইন সংশোধন এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের সুপারিশও রয়েছে। কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার জানান, এই প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তনের প্রস্তাব দিচ্ছে। দলীয় প্রভাবমুক্ত ও যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে একটি স্বচ্ছ রূপরেখা তৈরির কথা বলা হয়েছে। দুদকের সচিব থেকে পরিচালক পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ বন্ধের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান জানান, বুধবার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
পুলিশ সংস্কার কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার ওপর জোর দিচ্ছে। অপরাধে জড়িত সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা তৈরির জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করার সুপারিশও করা হয়েছে।
প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়ে পুলিশের সক্ষমতা উন্নত করার বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। চলতি মাসেই এই সংলাপ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সংস্কার প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি রূপরেখা তৈরি হতে পারে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে তারা ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। প্রথম ছয়টি কমিশনের মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুদকের সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সময়সীমা বাড়ানোর পর প্রথম পাঁচটি কমিশন ১৫ জানুয়ারি এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ৩১ জানুয়ারি তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫