নিচে আপনার অনুরোধ অনুযায়ী মূল ল
ঢাকা প্রেস-ডেস্ক রিপোর্ট:-
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন জুলাই গণহত্যা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে যমুনাস্থ সরকারি বাসভবনে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সরকারি প্রজ্ঞাপন পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।
বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে জানানো হয়, "দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বিচার প্রক্রিয়া ও সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম, এমনকি অনলাইনেও, নিষিদ্ধ করা হয়েছে।"
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী এনে এখন থেকে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে বিচারের মাধ্যমে সাজা দিতে পারবে।
উল্লেখ্য, এর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম দলটি নিষিদ্ধ হলো।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত সংশোধনী অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত দল বা সংগঠনকে বিচারের আওতায় আনতে পারবে ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে সোমবার সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
গত বৃহস্পতিবার রাতে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুক্রবার শাহবাগ অবরোধ করে অবস্থান নেন তারা। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য’-এর ব্যানারে এনসিপি নেতারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সময় আন্দোলনকারীরা যমুনার সামনে অবস্থান করছিলেন। সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর তারা উল্লাসে ফেটে পড়েন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুকে জানান, “চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকর করতেই আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হয়েছে।”
বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান
আওয়ামী লীগ ফেসবুক পেজে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, “অবৈধ সরকারের সব সিদ্ধান্তই অবৈধ।”
বিএনপি এই আন্দোলন থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখলেও, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট দল, এবি পার্টি, লেবার পার্টি, ছাত্রশিবিরসহ বহু সংগঠন আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেয়।
জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরাও ব্যাপকভাবে উপস্থিত থাকলেও দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে অবস্থান জানায়নি। অবশেষে আমির ডা. শফিকুর রহমান ফেসবুকে জানিয়ে দেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তি এখন একতাবদ্ধ।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, “এই নিষিদ্ধকরণ যতটা না আইনগত, ততটাই রাজনৈতিক। তাই এটি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন।”
আইনে কী পরিবর্তন এলো
১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনকে ২০১০ সালে সংশোধন করে আগের সরকার। সেই আইনের ভিত্তিতেই জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের বিচার হয়।
বর্তমানে ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলমান।
জাতিসংঘের তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডে ১৩২ শিশুসহ অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে এসেছে।
গত অক্টোবরে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়।
নভেম্বরে আইন সংশোধনে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তখন দল নিষিদ্ধের প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়। এবার আদালতের মাধ্যমে অপরাধী সংগঠনকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক পরিমণ্ডল
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার পর আবারও আলোচনায় আসে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা বিভিন্ন দল ও সংগঠন উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি করে রাস্তায় নামে।
বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে গত আগস্ট থেকেই তারা দাবি করে আসছে—আইন সংশোধনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে মানবতাবিরোধী দল হিসেবে বিচার করা হোক।
আইনের সংশোধনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যত এখন আদালতের রায়ের উপর নির্ভর করছে।
জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং দ্রুত বিচার কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে।