রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:১১ অপরাহ্ণ   |   ১১৩ বার পঠিত
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব

ঢাকা প্রেস নিউজ
 

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রপতি ও নির্বাহী বিভাগের দণ্ডিত অপরাধীদের ক্ষমা প্রদর্শনের এখতিয়ার নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দিয়েছে। আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়, যা পরবর্তী সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
 

২৮ দফা প্রস্তাবের মধ্যে ৬ নম্বর প্রস্তাবে ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন’ সংক্রান্ত বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আদালত কর্তৃক চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত অপরাধীদের রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগের ক্ষমার একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বোর্ড প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতেই ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
 

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা প্রদর্শনের বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে, এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই, যা বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান একটি রিট দায়ের করেছেন।
 

আইনজীবী ইশরাত হাসানের যুক্তি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার ফলে অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি মুক্তি পেয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই হত্যা মামলার আসামি। এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমার অপব্যবহার হতে পারে, যা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করেই এই রিটটি দায়ের করা হয়েছে।
 

রিট আবেদনে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা না থাকা সংবিধানের অন্যান্য অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা ব্যাখ্যা করতে রুল চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার প্রয়োগে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এই রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিবসহ ছয়জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
 

এর আগে, ২০১৪ সালে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছিল। সেই রিটে সংবিধানের ২৬, ২৭, ৩১, ৩৫, ১১১ ও ১১২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধান সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয় এবং এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, আইন সচিব ও জাতীয় সংসদ সচিবকে বিবাদী করা হয়েছিল।