টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কৃষি, প্রাণ-প্রকৃতি এবং খাদ্য নিরাপত্তার মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, বরং পরিবেশকে উন্নয়নের মূল ধারায় যুক্ত করতেই হবে।
সোমবার রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত "কৃষি উৎপাদন ও প্রাণ-প্রকৃতি সম্মেলন"-এর দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পরিবেশ সংরক্ষণ ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। ‘উন্নয়ন মানেই পরিবেশের ক্ষতি’—এই ভুল ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।”
তিনি শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “দূষণ রোধে পদক্ষেপ নিলে বলা হয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে, অথচ নদীনির্ভর লক্ষ মানুষের জীবন ও সুপেয় পানির সংকটের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে।”
কৃষিজমির ওপর হুমকির প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে—এটি কার্যত এক ধরনের দস্যুতা। সরকার কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের প্রণয়নে কাজ করছে, না হলে ভবিষ্যতে দেশে কৃষিজমিই থাকবে না।”
তিনি অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মাটি দূষণের আশঙ্কা প্রকাশ করে জৈব কৃষির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বলেন, “জৈব সার উৎপাদন ও বিতরণে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানির চাপ উপেক্ষা করে আমাদের নিজস্ব কৃষি মডেল তৈরি করতে হবে।”
পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভোগের ধরণ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “একদিকে আমরা বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে অভিযোগ করি, অথচ অন্যদিকে অহেতুক এসি ও লাইট ব্যবহার করি। আমাদের কনজাম্পশন প্যাটার্ন ও পরিবেশকে একত্রে বিবেচনায় নিতে হবে।”
তিনি আরও জানান, মধুপুর শালবন পুনরুদ্ধার প্রকল্প ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, যেখানে ইউক্যালিপটাস গাছ সরিয়ে পুনরায় শালগাছ ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। টেকসই ভবিষ্যতের জন্য নীতি, আইন ও আচরণে দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তিনি মত দেন।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মাল্টিমোড গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম এবং বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি খুশি কবীর।
কৃষি বিশেষজ্ঞ, গবেষক, পরিবেশবিদ এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।