প্রকাশকালঃ
২১ মে ২০২৩ ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ ১৪০ বার পঠিত
মানবতার মুক্তির দিশা মহাগ্রন্থ আল কোরআন। এটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্য রহমতস্বরূপ। এই মহাগ্রন্থকে মহান আল্লাহ কখনো ‘নুর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন, কখনো ‘হুদা’ বা হেদায়েত (পথনির্দেশক) বলে আখ্যা দিয়েছেন। কখনো আবার ‘শিফা’ (আরোগ্য) বলে আখ্যা দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এই মহাগ্রন্থের তিলাওয়াতকারী ও সংরক্ষণকারী, তা অনুযায়ী আমলকারীদের বিশেষ মর্যাদার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো—
হাফেজরা আল্লাহর পরিজন : পবিত্র কোরআন সম্পূর্ণ মুখস্থ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। আর বেশি পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াতকারীদের মহানবী (সা.) আল্লাহর পরিজন বলে সম্বোধন করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন তিলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।
’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫)
কোরআনের জ্ঞান ঈর্ষণীয় সম্পদ : কোরআনের জ্ঞান ও তার তিলাওয়াতের তাওফিক আল্লাহর অনন্য নিয়ামত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৯)
কোরআন এমন নিয়ামত, যে নিয়ামতের ব্যাপারে ঈর্ষা করা জায়েজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে ঈর্ষা করা যায় না।
এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তাআলা কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা তাকে বলে, হায়! আমাদের যদি এমন জ্ঞান দেওয়া হতো, যেমন অমুককে দেওয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মতো আমল করতাম। অন্য আর এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে খরচ করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলে, হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মতো সম্পদ দেওয়া হতো, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও তেমন ব্যয় করতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০২৬)
কোরআন কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে : দুনিয়ায় যারা কোরআন চর্চা করবে, তা অনুযায়ী আমল করবে, তাদের জন্য পরকালে মহাপুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এই কোরআন এমন একটি পথ দেখায় যা সবচেয়ে সরল এবং যে মুমিনরা নেক আমল করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৯)
হাদিসের তথ্যমতে মহান আল্লাহর হুকুমে কিয়ামতের দিন পবিত্র কোরআন তাদের জন্য সুপারিশ করবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১৮৩৯)
কোরআনচর্চাকারীকে বিশেষ সংবর্ধনা : যারা দুনিয়াতে কোরআন শিখবে সে মতে আমল করবে, কোরআন হিফজ করবে। কিয়ামতের দিন তাদের বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কোরআন কিয়ামত দিবসে হাজির হয়ে বলবে, হে আমার প্রভু, একে (কোরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু, তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু, তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার ওপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি একেক আয়াত পাঠ করতে থাকো এবং ওপরের দিকে উঠতে থাকো। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১৫)
হাফেজদের ফেরেশতাদের সঙ্গে তুলনা : পবিত্র কোরআন হিফজ করা, চর্চা করা এতটাই ফজিলতপূর্ণ কাজ যে রাসুল (সা.) তার হিফজকারীদের ফেরেশতাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, কোরআনের হাফেজ পাঠক লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতাদের মতো। খুব কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও যে বারবার কোরআন পাঠ করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে। (বুখারি, হাদিস : ৪৯৩৭)
হাফেজের মা-বাবাকে বিশেষ সম্মাননা : সাহল ইবনু মুআজ আল-জুহানি (রহ.) থেকে তার পিতা থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তা অনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার মা-বাবাকে এমন মুকুট পরানো হবে যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল হবে। ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে (তাহলে তার আলো কিরূপ হবে?)। তাহলে যে ব্যক্তি কোরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করো তো!’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫৩)
তাই আমাদের উচিত, সম্ভব হলে নিজেই কোরআন হেফজ শুরু করা, তা সম্ভব না হলে কমপক্ষে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা, আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কোরআনে হাফেজ বানানোর চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন ।