সিলেটে সাদাপাথর লুট: জেলা প্রশাসন ও দুদকের তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুটপাটের অভিযোগ দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনায় পৃথকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সরকারি-বেসরকারি ৫১ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন
জেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের কমিটি সাত পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বুধবার (২০ আগস্ট) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পদ্মাসন সিংহ প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেন। বদলির আদেশ পাওয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, প্রতিবেদনটি পড়ে না দেখেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
কমিটির দায়িত্ব ছিল—ঘটনাস্থল পরিদর্শন, দায় নিরূপণ ও সুপারিশ প্রদান। পুলিশ ও প্রশাসনের তথ্যের ভিত্তিতে ১০টি সুপারিশ দিয়েছে তারা। তবে বিজিবির কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি তদন্ত কমিটি, এমনকি পাঠানো চিঠিরও কোনো জবাব আসেনি।
প্রধান সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে—
-
উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন
-
সাদাপাথরে বিএমডির স্থায়ী অফিস স্থাপন
-
টাস্কফোর্সের অভিযান ও চেকপোস্ট বৃদ্ধি
-
পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়ন কর্মসূচি
-
প্রত্যেক সংস্থার নিজস্ব তদন্ত ও দায় নির্ধারণ
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে রেলওয়ে বাংকার এলাকা ও আশপাশের পর্যটন অঞ্চল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আহ্বায়ক করা হয়েছে বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীনকে এবং সদস্যসচিব করা হয়েছে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) দেবজিৎ সিংহকে।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন
দুদকের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রশাসন ও বিজিবির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কয়েক মাসে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের যোগসাজশের কারণে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকারি সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও আঁতাত ছাড়া এত বড় ধরনের আত্মসাত সম্ভব ছিল না।
রাজনৈতিক নাম ঘিরে বিতর্ক
প্রতিবেদনে বিএনপির ২০ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সিলেট মহানগর বিএনপি সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী কোনোভাবেই জড়িত নন বলে দাবি জানানো হয়।
একইভাবে জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগরের আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীনের নামও প্রতিবেদনে এসেছে। জেলা ও মহানগর জামায়াত যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগের নিন্দা জানিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
দুদকের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সা’দাৎ জানান, প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে অনুসন্ধান নথি খোলার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি মিললে প্রত্যেকের বিষয়ে আলাদাভাবে তদন্ত চালিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫