আগে দরকার সাংবাদিকদের সংস্কার
ঢাকা প্রেস,নিয়ন মতিয়ুল:-
ক’দিন আগে ‘পুঁজিবাদের’ কাছে গণমাধ্যমের ‘মাথানত’ করার ‘উদ্বোধন’ করেছেন কিংবদন্তি সাংবাদিক শফিক রেহমান। দেড়-দুই দশকে বঞ্চিত অনেকে আগামীর ক্ষমতাসীনদের জন্য হাউজে হাউজে দূর্গ গড়ে তুলছেন। আগে যারা প্রেসক্লাব-ইউনিয়নে পেছনের চেয়ারে বসতেন, পেশা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি গিয়ে খামার করতেন, তারা এখন ফিরছেন। শুধু ক্লাব-ইউনিয়নের চেয়ারই নয়, তারা বড় বড় হাউজের বড় বড় চেয়ারও লাভ করছেন।
তাহলে কি আগের ফরমেটেই ফিরছে গণমাধ্যম? শুনছি, বানের মতো টাকা ঢেলেও কাঙ্ক্ষিত মুনাফা না পেয়ে অনলাইনসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের মালিক হতাশ। বলছেন, “আর পারছি না বাপু। শাটডাউন করে আমাকে উদ্ধার করো।” হাই-ব্র্যান্ডের গণমাধ্যমে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া বড় সাংবাদিকরা এ নিয়ে কী ভাবছেন? সংবাদমাধ্যমকে ‘প্রফিটেবল’ (+জনপ্রিয়) করার পরিকল্পনা কী তাদের?
দিন শেষে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে গণমাধ্যম তো একটা ‘বিজনেস’। নিউজ যেখানে বিক্রয়যোগ্য পণ্য। যার উৎপাদক সাংবাদিকরা। যে পণ্যের ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয় ভালো, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতায়। প্রফিটেবল না হলে বিনিয়োগ তো বন্ধ করবেনই মালিকরা। সবাই তো আর লতিফুর রহমান নন যে বলবেন, “টাকা যত লাগে নাও, আমার একনম্বর গণমাধ্যম চাই। ” আবার সবাই তো মতিউর রহমানও নন যে, বিজনেস আর সাংবাদিকতাকে একসুতোয় গাঁথতে জানবেন।
শুধু নিউজমিডিয়া বিজনেসের কমিউনিকেশনেই জোর দিয়েছিলেন সাংবাদিক শ্যামল দত্ত। শূন্য থেকে শুরু করে তাই দু’হাত ভরে মুনাফা লুটেছেন। নিউজকে পপুলার পণ্য বানানোর খেলায় পিছিয়ে থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বঞ্চিত করার কারণেই কি বন্ধ হয়েছে ভোরের কাগজ? ক্ষমতাসীন দলকে প্রমোট করে, বিজ্ঞাপনের সর্বোচ্চ রেট বাগিয়ে, দলদাস হয়ে, জনগণের অবিশ্বাস নিয়ে টিকে থাকবেন, নাকি পপুলার হয়ে মুনাফার প্রতিযোগিতায় নামবেন- এই প্রশ্নের উত্তর হাতে রেখেই নামতে হবে গণমাধ্যম সংস্কারে।
প্রশ্ন থেকেই যায়, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে গণমাধ্যম যখন একটা ‘বিজনেস’ তখন এর সংস্কার কোন পথে, কীভাবে? অংশীজনদের বেশিরভাগই যখন পক্ষপাতিত্বের। “মুক্ত গণমাধ্যমের আবার সংস্কার কেন, সংস্কার মানেই তো সরকারের নিয়ন্ত্রণ”-এই প্রশ্ন রেখেছেন মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। সংবাদকর্মীদের ন্যুনতম বেতন ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাবের পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক শেয়ার হয়েছে। প্রশ্ন, এই প্রস্তাবে উদ্যোক্তারা কী বলছেন?
নোট: নব্বই দশকে সেরা সব পত্রিকার প্রবল জোয়ার, শূন্য দশকের পর ডজন ডজন টিভির আগমন, স্টার সাংবাদিকদের চমক, এর মধ্যেই অনলাইন সংবাদমিডিয়ার সুনামি- এতকিছুর পরও গণতন্ত্র-সুশাসন অধরাই থেকে গেছে। কারণ আমাদের সাংবাদিকতা প্রবলভাবে অতীতমুখী। নতুন প্রজন্মকে কানেক্ট করতে (পাঠক বানাতে?) পারেন না সাংবাদিকরা। তারা শুধু রাষ্ট্রই বোঝেন, সমাজ বোঝেন না। মননে-মগজে ঔপনিবেশিক আর দলদাসত্বের কারণেই তারা গণমাধ্যমের সংবাদভিত্তিক টেকসই বিজনেস মডেল তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতেই আগে সংস্কারের রূপরেখা দরকার।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫