অনলাইন ডেস্ক:-
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের কাছে মা ও দুই শিশুসহ চারজনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। হামাসের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল যে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এসব জিম্মি নিহত হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স ও আল জাজিরা।
ফেরত দেওয়া দুই শিশুর নাম কেফির বিবাস ও অ্যারিয়েল বিবাস (৪)। তাদের মা শিরি বিবাস এবং চতুর্থ জিম্মি ওদেদ লিফশিৎজ।
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গত মাসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার আওতায় জিম্মি মুক্তি প্রক্রিয়া চলছে। একই চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদেরও মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের কিবুতজ নির ওজ এলাকা থেকে বিবাস পরিবারের সদস্যরা হামাসের হাতে জিম্মি হন। সেই সময় কেফিরের বয়স ছিল মাত্র নয় মাস। তাদের বাবা ইয়ারদেন বিবাসও হামাসের হাতে বন্দি হন।
গত বছরের নভেম্বরে হামাস জানায়, ইসরায়েলি বিমান হামলায় ওই মা ও দুই শিশু নিহত হয়েছে। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তখন এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
রেড ক্রসের তথ্য অনুযায়ী, হামাসের ১৯ জন জিম্মির বিনিময়ে ইসরায়েল ১,১৩৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। আজ আরও চারজনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে হামাস মোট ২৩ জন জিম্মিকে ইসরায়েলের কাছে ফিরিয়ে দিল।
চলতি মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গাজা থেকে মুক্তি পান ইয়ারদেন বিবাস। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই শিশু ও মায়ের ভাগ্য সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটবে না।
এখন মা ও দুই শিশুসহ চারজনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার মধ্য দিয়ে গাজা থেকে ইসরায়েলে প্রথমবারের মতো কোনো মৃত জিম্মিকে ফিরিয়ে নেওয়া হলো।
১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের মধ্যে হামাস ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় এবং বিনিময়ে ইসরায়েলও কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।
এই সময়কালে ইসরায়েলি বাহিনীর গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ছাড়তে হবে, এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা বাড়ি ফেরার অনুমতি পাবে। একইসঙ্গে প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী লরিকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেবে তেল আবিব।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে। এই ধাপে পুরুষ ইসরায়েলি সেনারা মুক্তি পাবে। তৃতীয় ও শেষ ধাপে গাজার পুনর্গঠন কাজ শুরু হবে, যা সম্পন্ন হতে কয়েক বছর সময় লাগবে।
চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, প্রথম ধাপে মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের মধ্যে নারী, শিশু, নারী সেনা, বয়স্ক, অসুস্থ ও আঘাতপ্রাপ্ত বেসামরিক ব্যক্তিরা রয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করার জবাবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, টানা ১৫ মাসের সংঘাতে গাজায় প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। যুদ্ধের ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই উপত্যকার ২৩ লাখ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।