ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, বেনাপোল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো চার পণ্যবাহী ট্রাক

ঢাকা প্রেস নিউজ ডেস্ক:-
ভারত সরকার বাংলাদেশের জন্য পেট্রাপোল ও গেদে স্থলবন্দর হয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। তবে দিল্লির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তা সত্ত্বেও গতকাল বুধবারই বেনাপোল বন্দর থেকে চারটি পণ্যবোঝাই ট্রাক ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই হঠাৎ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তৎপরতা শুরু হয়েছে। বুধবার রাতেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, সিদ্ধান্তটি নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনে প্রভাব ফেলবে না। তবে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা ও সিলেট বিমানবন্দর এবং অন্যান্য সম্ভাব্য বিকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (CBIC) গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভারতের বিমান ও সমুদ্রবন্দরে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছিল, যার ফলে পণ্যের গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি এবং রপ্তানিকারকদের খরচ বেড়ে যাচ্ছিল।
সিবিআইসির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৯ জুন থেকে পেট্রাপোল ও গেদে সীমান্ত দিয়ে নাভা শেভা ও কলকাতা বন্দরে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা চালু হয়েছিল। পরে ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিমানবন্দরকেও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়। এখন এই সব সুবিধাই বাতিল করা হলো।
এ বিষয়ে বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে লজিস্টিক ব্যয় বাড়বে এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনেকে একে কূটনৈতিক টানাপড়েন হিসেবেও দেখছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারত বাংলাদেশের পণ্য সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে তাদের নিজস্ব সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে আগ্রহী ছিল। কিন্তু তা বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক না হওয়ায় ব্যবহার সীমিত ছিল। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির তুলনায় রাজনৈতিক প্রভাবই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে অল্প পরিমাণ ট্রানজিট পণ্য এসেছে এ বন্দর দিয়ে, তাই সরাসরি বাণিজ্যিক ক্ষতির আশঙ্কা কম। অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব ক্ষতির সম্ভাবনাও সামান্য। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হবে না।
বেনাপোল থেকে ফেরত আসা ট্রাকগুলোর বিষয়ে জানা গেছে, সেগুলো ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেড’-এর পণ্যবোঝাই ছিল। ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমসে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি পৌঁছানোর পর এসব ট্রাক ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির পরিবর্তন ভারতকে এ সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ‘মেড ইন ভারত’ নামে পণ্য রপ্তানি করতে না পারে, সে সতর্কতা থেকেই হয়তো এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে কূটনৈতিক চ্যানেলে মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন তিনি।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫