বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজানীয় টাকাও নেই ডলারও নেই

প্রকাশকালঃ ১৩ জুলাই ২০২৪ ০৩:৩১ অপরাহ্ণ ৫২১ বার পঠিত
বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজানীয় টাকাও নেই ডলারও নেই

আার্থিক দুরবস্থার কারণে দিন দিন বাংলাদেশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়ছে। এমনকি ধীরে ধীরে ঋণ পাওয়ার সক্ষমতাও কমছে। অন্যদিকে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। এখন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজানীয় টাকাও নেই ডলারও নেই।


কিভাবে বাস্তবায়ন হবে। তাই দেশের আর্থিক খাতের সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই বলেন মন্তব্য করেছেন পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। আহসান এইচ মনসুর বলেন, পর্যাপ্ত ডলার না থাকার কারণে জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন খাতের বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার।


যদি স্বাস্থ ভালো না থাকে তাহলে ভার বহন করা যায় না। ব্যাংক খাতরে দুর্বলাতার কারণে এখন ব্যাংক ব্যক্তি খাতকেও ঋণ দিতে পারছেনা আবার সরকারকেও ঋণ দিতে পারছে না। এখন ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ।  এবছর যদি বাড়ে তাহলে সেটা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হতে পারে। সেই হিসাবে এবছর আমানত আসবে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ছে তা কিভাবে দিবে ব্যাংক?

 

সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে ব্যক্তি খাত টাকা কোথায় পাবে। কিন্তু বাজেটে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ২৭ শতাংশ। কিন্তু এপর্যন্ত ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগা ২২ থেকো ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরাফেরা করছে। যদি ব্যাংক খাতের আমানতের প্রবৃদ্ধি না বাড়ে, আবার সরকারকে ঋণ দিতে হয় তাহলে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিভাবে অর্জন হবে।

 

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল আর্থিক খাতে ব্যপক সংস্কার আনা হবে। কিন্তু ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্তু কিছুই হয়নি। এটা খুবই হতাশাজনক। দেশের স্বার্থেই এখন ব্যাংক খাতের সংস্কার খুবই জরুরি। আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে সেটা ভালো। কিন্তু নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সংস্কার দরাকার। আমরাতো আমানত খেয়ে ফেলেছি। এভাবে ব্যাংক কতদিন চলবে?

 

ব্যাংক খাত নিয়ে স্বেতপত্র প্রকাশ করা দরাকার। সেটা করতে হবে সরকারকেই। বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে নয়। ব্যাংক খাতে আজকে যে এই অবস্থা হলো তার কারণ খুজে বের করতে হবে। ঋণ আদয় না ক‌রে ঋণের সুদকে আয় দে‌খি‌য়ে মুনাফা দেখা‌চ্ছে ব্যাংক। সেই মুনাফার অর্থ থে‌কে লভ্যাংশ দি‌চ্ছে। সরকার‌কে ট্যাক্সও দি‌চ্ছে। আস‌লে কো‌নো আয়-ই হয়‌নি। আমান‌তের অর্থ লু‌টে খা‌চ্ছে কয়েকটি গোষ্ঠী। সরকারের সহযোগীতায় তারা পুষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের কারণেই এখন আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে কার্পেটের নিচে ময়লা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটা সময় তাতো দুর্গন্ধ ছড়াবেই।

 

লক্ষ্য করা যাচ্ছে এতো সমস্যার মধ্যেও লভ্যাংশ দিচ্ছে অনেক ব্যাংক। আসেলে ঘ‌রের থালাবাসন বেঁচে কোরমা পোলাও খা‌চ্ছি আমরা। এভা‌বে আর কত‌দিন ব্যাংক চল‌তে পার‌বে?

 

অমানত শেষ হ‌য়ে যাবে। গ্রাহ‌কের অর্থ আর ফেরত দি‌তে পার‌বে না ব্যাংক। এখন আর্থিক খা‌তের 'ক্লিনিং‌' কার্যক্রম প্রয়োজন বলে মনে করেন ড. আহসান এইচ মনসুর। আমা‌দের ব্যাংক খা‌তের সমস্যাগুলো সমাধান না ক‌রে জিইয়ে রাখ‌ছে।  আর্থিক খা‌তে সব‌চে‌য়ে বে‌শি তথ্য লুকা‌নো হ‌চ্ছে অ‌ভি‌যোগ ক‌রে এই অর্থনী‌তি‌বিদ ব‌লেন, দে‌শের সব‌চে‌য়ে বে‌শি তথ্য লুকা‌নো হয় আর্থিক খা‌তে। যেখা‌নে স‌ঠিক ত‌থ্য সব‌চে‌য়ে বে‌শি জরু‌রি। বাংলা‌দেশ ব্যাংক এখন ১১ শতাংশ খেলা‌পি ঋণ দেখা‌চ্ছে। আস‌লে বাস্ত‌বে খেলা‌পি বা মন্দ ঋণ ২৫ শতাংশ। এভা‌বে আর বে‌শিদিন চল‌তে পার‌বে না।

 

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপ‌তি‌ত্তে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ক‌রেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কা‌শেম। প্রবন্ধ উপস্থান করেন ইআরএফ-র জেষ্ঠ্য সদস্য ওবাইদুল্লাহ রনি ও সানাউল্লাহ সাকিব। প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তারা জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো অনেক বড়-বড় প্রকল্প হয়েছে। এসব প্রকল্পের সুফল হিসেবে যেখানে কর্মসংস্থান বেড়ে মূল্যস্ফীতি নাগালের মধ্যে থাকার কথা। তবে ডলার সঙ্কট, ব্যাংক খাতে দূরবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। সরকারের সব অর্জন যেন এই উচ্চ মূল্যস্ফীত এবং ব্যাংক খাতের দূরবস্থা ম্লান করে দিচ্ছে।

 

আর্থিক খাতে শৃংখলা ধরে রাখতে কঠোর নীতির পরিবর্তে একের পর এক নীতি সহায়তার নামে ঋণখেলাপি, অর্থপাচারকারীদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে মেয়াদি ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় এবং ৯-৬ এর মতো নীতি গ্রহণ করে অর্থনীতিকে বিপর্যয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। দেশের মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরস্থিতি এবং ব্যাংক খাতে বিশৃংখলার বিষয়টি সবার জানা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কাজে ব্যর্থ হয়েছে বলে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বলেছেন। আবার যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ে সবাই এখন অস্বস্তিতে আছে। সর্বশেষ সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ঠেকেছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত ১৩ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।

 

দেশে উচ্চ মল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে কৃত্রিমভাবে ডলারের দর ৮৪-৮৬ টাকায় ধরে রেখেছিল। তবে করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর তা আর ধরে রাখা যায়নি। শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উপায়ে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে ডলারের দর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ২০২২ সালের আগস্টে কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি হেডকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এমডিদের ব্যাখ্যা তলব করা হয়।

 

এরপর ব্যাংক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে ডলার বাজার আরও খারাপ হয়। ডলারের দর উঠে যায় ১১০ টাকায়। একদিকে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, একই সঙ্গে দীর্ঘদিন কৃত্রিমভাবে ডলারের দর ধরে রাখার প্রভাবে টানা দু'বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। আবার ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমে ২০২১ সালের আগস্টের ৪৮.০৬ বিলিয়ন থেকে এখন ২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। তবে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৫ বিলিয়নে নেমেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ ডলার সঙ্কট। অথচ অর্থপ