|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৩০ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৯ অপরাহ্ণ

বনের নিপুণ কারিগর টুনটুনি পাখি আজ বিলুপ্তির পথে


বনের নিপুণ কারিগর টুনটুনি পাখি আজ বিলুপ্তির পথে


নিউজ ডেস্ক-ঢাকা প্রেস


 

গাছের পাতাকে একত্রে সেলাই করে বাসা বানানো ক্ষমতার জন্য টুনটুনি পাখি অনেক জনপ্রিয়। এই চড়ইজাতীয় ছোট্ট পাখিটিকে খোলা খামার জমি, ঝোপঝাড়, বন এবং বাদারে সহজেই দেখা যেত।
 

“দর্জি পাখি” নামে পরিচিত টুনটুনি পাখির নাম এসেছে তার বাসা বানানোর অনন্য শৈলী থেকে। এক সময় গ্রামবাংলার ঝোপঝাড়, বনজঙ্গল ও বাদারে এই পাখি প্রচুর দেখা যেত। তবে আজকাল আগের মত চোখে পড়ে না। এ পাখি ফুলের মধু খেয়ে পরাগায়নে সাহায্য করে এবং ফসলের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে পরিবেশকে সুস্থ রাখে।
 

টুনটুনি পাখির নামকরণ এলাকাভেদে বিভিন্ন—টুনি, মধুচুষকি, দুগা টুনটুনি, বেগুন টুনটুনি, মৌটুসি, নীলটুনটুনি, দর্জি, মৌটুসকিসহ আরও অনেক নাম আছে।
 

টুনটুনি পাখি যদিও ছোট, কিন্তু বাসা তৈরি করার দক্ষতায় অনন্য। যদিও বাবুই পাখিকে স্থপতি (Architect) বলা হয়, টুনটুনির নির্মাণশৈলী সম্পূর্ণ ভিন্ন। এরা খুব চঞ্চল প্রকৃতির; গাছের ডালে লাফিয়ে বেড়ে, পিঠের লেজ নেড়ে “টুনটুন” শব্দ করে ওড়ে। মানুষের খুব কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা কিছুটা বোকা।
 

গ্রামের মানুষ এই পাখিকে খুব আদর করে “দর্জি পাখি” নামে ডাকে। এই পাখি ঠোঁট দিয়ে পাতাগুলো সেলাই করে অত্যন্ত মজবুত ও সুন্দর বাসা বানায়। সাধারণত ঝোপঝাড় জাতীয় গাছ বা মাঝারি উচ্চতার গাছের পাতায় বাসা বাঁধতে পছন্দ করে—যেমন খোকশা, লেবু, ডুমুর, সূর্যমুখী, কাঠবাদাম। তবে সবচেয়ে বেশি পছন্দের গাছ হলো খোকশা।
 

টুনটুনি পাখির স্ত্রী ও পুরুষ মিলিত হয়ে ১–২টি পাতা সেলাই করে বাসা তৈরি করে। একটি বাসা বানাতে ৪–৫ দিন সময় লাগে। এরা তুলা, সুতা, লতা-পাতা, গরু বা মহিষের লেজের চুল, পালক ইত্যাদি দিয়ে দৃষ্টিনন্দন বাসা বানায়।
 

প্রজননকাল সাধারণত মাঘ মাসের শেষ থেকে ফাল্গুন–আশ্বিন মাস পর্যন্ত। বাসা তৈরি শেষ হলে ৪–৫টি ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর পর স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ই বাসাসহ পরিবেশ পরিবর্তন করে। বছরে ২–৩ বার ডিম পাড়ে টুনটুনি পাখি। এ সময় কেউ বাসার কাছে গেলে পাখি এক সঙ্গে টুনটুন শব্দ করে ডিম ও বাচ্চাকে রক্ষা করে। তবে অনেক সময় ঝড় বা মানুষের কারণে বাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
 

গ্রামের শিশুদের টুনটুনির বাসা খুব আকর্ষণ করে, কিন্তু কখনো কখনো তারা বাসা, ডিম বা বাচ্চা নষ্ট করে।
 

দুর্ভাগ্যবশত, আজকাল টুনটুনির নিপুণ কারিগরিত্ব দেখার সুযোগ খুব কম। বন উজাড় ও পরিবেশ ধ্বংসের কারণে এ পাখিও ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫