|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২৫ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০২:৪৮ অপরাহ্ণ

সনদ নয়, জুলাই আদেশের ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে


সনদ নয়, জুলাই আদেশের ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে


জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণঅভ্যুত্থানের ক্ষমতাবলে একটি “আদেশ” জারির সুপারিশ করতে ঐকমত্য কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞ প্যানেল। তাদের মতে, এবার গণভোট হবে সনদের নয়, আদেশের ওপর। নাগরিকরা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটের মাধ্যমে জানাবেন—তারা এই আদেশ অনুমোদন করেন কি না। গণভোটে আদেশ অনুমোদিত হলে জুলাই সনদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন আইনি বৈধতা পাবে।
 

রোববার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এই পরামর্শ দেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে আদেশের প্রাথমিক খসড়া (প্রাক-খসড়া) তৈরি করা হয়েছে এবং দুই-তিন দিনের মধ্যেই তা চূড়ান্ত করা হবে। প্রাক-খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ তাদের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, যার ধারাবাহিকতায় গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছা অনুযায়ী এই সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারি করবে। প্রাথমিকভাবে আদেশটির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে—“জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫”
 

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের উল্লেখ থাকবে আদেশে। অর্থাৎ, আদেশ সনদের অংশ নয়, বরং সনদ হবে আদেশের অংশ। এতে গণভোট আয়োজনের বিধানও যুক্ত থাকবে। ওই বিধান অনুযায়ী গণভোট অনুষ্ঠিত হবে, এবং জনগণ অনুমোদন দিলে সনদ কার্যকর বলে গণ্য হবে। সনদে থাকা সংস্কার অনুযায়ী পরবর্তী সংসদের জন্য সংবিধান সংশোধন বাধ্যতামূলক হবে।
 

কমিশনের সমন্বয়ক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানিয়েছেন, আগের সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আদেশে কী কী অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে তা নিয়েও মতবিনিময় হয়েছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। আগামী সোম বা মঙ্গলবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে—কবে নাগাদ সরকারকে সুপারিশ পাঠানো সম্ভব।
 

উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে ৮৪টি সংস্কার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মৌলিক সংস্কারে বিএনপির ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) রয়েছে। দলটি জানিয়েছে, এই সংস্কারগুলো তারা ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়ন করবে না। বিএনপির দাবিতে সনদে যুক্ত হয়েছে, কোনো দলের যেসব সংস্কারে ভিন্নমত রয়েছে, সেগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করে জয়ী হলে বাস্তবায়ন করা যাবে। অন্যদিকে, জামায়াত, এনসিপি ও আরও কয়েকটি দল বলেছে—গণভোটে পুরো সনদ উপস্থাপন করতে হবে, ভিন্নমত গণ্য করা যাবে না।
 

রোববারের বৈঠকে নোট অব ডিসেন্ট নিয়েও আলোচনা হয়। এক বিশেষজ্ঞ বলেন, আগের প্রস্তাবে গণভোটে দুটি প্রশ্ন রাখার কথা বলা হয়েছিল—একটি ঐকমত্যভিত্তিক সংস্কার নিয়ে, অন্যটি ভিন্নমতের সংস্কার নিয়ে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দুটি প্রশ্নে গণভোট সম্ভব নয়। তাই সনদের পরিবর্তে আদেশের ওপর গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্তই বেশি কার্যকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জনগণ যদি আদেশ অনুমোদন করে, তবে সনদ ও তার সব বিধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদিত হবে এবং পরবর্তী সংসদ সে অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করবে।
 

ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হলেও এর বাস্তবায়ন কাঠামো এখনও নির্ধারিত হয়নি। আগামী ৩১ অক্টোবর কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরকারকে সুপারিশ দেওয়া হবে—কীভাবে আদেশ জারি করা হবে এবং গণভোটের সময়সূচি কেমন হবে।
 

রাজনৈতিক দলগুলো গণভোটের বিষয়ে একমত হলেও, সময়সূচি নিয়ে বিভক্তি রয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো চায় নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হোক; অপরদিকে জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। বিএনপি বিদ্যমান আইনের আওতায় গণভোট চায় এবং আদেশ জারির বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি আদেশের মাধ্যমেই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে চায়।
 

এনসিপি আরও প্রস্তাব করেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আদেশ জারি করবেন। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মত দেন যে, সাধারণভাবে রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে সরকার আদেশ জারি করার নজির নেই, তবে গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের কর্তৃত্ববলে গঠিত সরকার চাইলে এমন আদেশ জারি করতে পারে।
 

রোববারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন। ভার্চুয়ালি যোগ দেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিনমঈনুল ইসলাম চৌধুরী
 

কমিশনের পক্ষ থেকে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামানড. মো. আইয়ুব মিয়া


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫