মাদক চোরাচালান ও টেকনাফ: সীমান্তের নীরব যুদ্ধ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০২ জুলাই ২০২৫ ০২:২৪ অপরাহ্ণ   |   ৪০ বার পঠিত
মাদক চোরাচালান ও টেকনাফ: সীমান্তের নীরব যুদ্ধ

মোহাম্মদ করিম, বিশেষ প্রতিনিধি:-


 

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকা টেকনাফ এখন মাদক চোরাচালানের এক বিপজ্জনক কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সাগর ও নদীপথে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিয়ানমার থেকে আসছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র কড়া নজরদারি সত্ত্বেও মাদকচক্র প্রতিনিয়ত কৌশল পরিবর্তন করে চোরাপথে চালান পাচার করে চলেছে।
 

এর বাস্তব প্রমাণ মেলে ২০২৫ সালের ২ জুলাই তারিখে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) পরিচালিত দুটি সফল অভিযানে। প্রথম অভিযানে খুরেরমুখ এলাকার এক নারীর বাড়ির মুরগির খামার থেকে গোপনে লুকানো ২৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। একইদিন ভোরে সাবরাং ইউনিয়নের আলীর ডেইল এলাকায় ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয় দুই মাদক পাচারকারীকে। উভয় ক্ষেত্রেই মাদক লুকানো ছিল আবাসিক বসতবাড়ির ভেতরে—যা সমাজের গভীরে মাদক সমস্যার শিকড় বিস্তারের উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে।
 

এসব ঘটনা নিছক বিচ্ছিন্ন নয়; বরং এগুলোর পেছনে সক্রিয় রয়েছে একটি সুসংগঠিত আন্তর্জাতিক মাদকচক্র। স্থানীয়দের অভিযোগ—বিভিন্ন সময় কিছু চালান আটক হলেও, অধিকাংশ চালান অদৃশ্য হয়ে যায় সীমান্তের জটিল ভৌগোলিক গঠন ও সামুদ্রিক পথ ব্যবহারের কারণে। ফলে এই চোরাচালান প্রতিরোধ করা ক্রমেই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
 

বিজিবি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে এবং জিরো টলারেন্স নীতির কথা বারবার উচ্চারণ করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি দরকার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ—সমন্বিত গোয়েন্দা তৎপরতা, প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার, সীমান্তবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সার্বিক সামাজিক সচেতনতা।
 

মাদকের বিস্তার শুধু সীমান্তে সীমাবদ্ধ নেই; এটি ইতোমধ্যে শহর, গ্রাম, মহল্লায় প্রবেশ করে তরুণ সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। সুতরাং, টেকনাফে চলমান এই নীরব লড়াই কেবল একটি সীমান্তরক্ষা অভিযান নয়—এটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষার একটি অপরিহার্য সংগ্রাম।