|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৪ মে ২০২৫ ১১:৪৫ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৪ মে ২০২৫ ০১:১০ অপরাহ্ণ

অন্তর্বর্তী সরকার পুনর্গঠনে সম্ভাব্য আইনি জটিলতা


অন্তর্বর্তী সরকার পুনর্গঠনে সম্ভাব্য আইনি জটিলতা


ঢাকা প্রেস-নিউজ ডেস্ক:-

 

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে এর ফলে কী ধরনের আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে—তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। বিবিসি বাংলার খবরে উঠে এসেছে, সরকার পুনর্গঠনের সুযোগ এবং বাধা—দুই দিক থেকেই আইনি প্রশ্নগুলো সামনে আসছে।
 

অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয় জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এক মন্তব্য থেকে। তিনি জানান, যমুনা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তার কাছ থেকেই পদত্যাগের সম্ভাবনার কথা জেনেছেন।
 

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—যদি অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করেন, তাহলে বর্তমান সরকার কাঠামো কীভাবে পরিচালিত হবে? তা পুনর্গঠন সম্ভব কি না, কিংবা আইনি বাধা কতখানি?

 

আইনজীবীদের মধ্যে এ বিষয়ে রয়েছে ভিন্নমত। কেউ কেউ বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে ইউনূসের পদত্যাগ কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করবে না। রাষ্ট্রপতি তখন নতুন একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে পারবেন, যার মূল দায়িত্ব হবে নির্বাচন পরিচালনা।
 

তবে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তার মতে, বর্তমানে সংবিধান কিংবা আইনের ধারা অনুযায়ী সব কিছু হচ্ছে না। তিনি বলেন, “আইনের ভূমিকা এখন অবান্তর। এখন সবকিছুই আইনের বাইরে চলছে। জোড়াতালির মাধ্যমেই সরকার চলছে।”
 

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর উচ্চ আদালত এই সংশোধনীর একটি অংশ বাতিল করে দেয়, যা আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পথ উন্মুক্ত করে।

 

৮ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তখন সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান। সেই ভিত্তিতে উপদেষ্টা পরিষদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়।
 

ড. শাহদীন মালিক বলেন, "রাজনৈতিক বাস্তবতার চাপে সংবিধানের বাইরে গিয়ে সরকার গঠিত হয়েছে। তবে এটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরিপন্থী, যেখানে বলা হয়েছে অসাংবিধানিক কোনো কিছুকে সাংবিধানিক বলা যায় না।”
 

আইনজীবী মনজিল মোরসেদও মনে করেন, গণঅভ্যুত্থানের কারণে তৈরি হওয়া শূন্যতা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল, যা তৎকালীন প্রেক্ষাপটে যৌক্তিক ছিল। তবে এখন আর সেই প্রয়োজন নেই—এখন দরকার একটি নির্বাচন। তিনি বলেন, “নির্বাচন যদি জরুরি হয়, তাহলে নতুন করে অন্তর্বর্তী সরকার নয়, বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনই যথেষ্ট।”
 

তার মতে, আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং নির্বাচনের আগে অন্তত ৯০ দিন আগে এ সরকার গঠন করতে হবে।

 

অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করলে তার সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মনজিল মোরসেদ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা যাদের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছেন, তার অনুপস্থিতিতে তাদের দায়িত্ব পালন করা অনৈতিক হবে।” তবে রাষ্ট্রপতির মনোনয়নে নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করাও সম্ভব।
 

শাহদীন মালিক এ প্রসঙ্গে বলেন, “যদি ইচ্ছামতো চলতে হয়, তাহলে সব কিছুই করা সম্ভব। কিন্তু সেটি আইনের আওতায় থাকবে না।”

 

সরকারের পক্ষ থেকে ইউনূসের পদত্যাগ ইচ্ছার বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম জানান, ইউনূস মনে করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার অভাবে তিনি কাজ করতে পারছেন না। তার কথায়, “আমি তো এভাবে কাজ করতে পারবো না।”
 

অন্যদিকে পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান জানান, সরকারের দায়িত্ব কেবল নির্বাচন নয়, বরং সংস্কার ও বিচারও এর অংশ। তবে যেভাবে প্রতিটি দাবিতে মানুষ রাজপথে নেমে আসছে, তাতে সরকার কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫