সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ‘বহুত্ববাদ’ মূলনীতি ও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের অভিন্ন পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন প্রণয়নের সুপারিশের বিরোধিতা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। দলটি এসব প্রস্তাবকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে দ্রুত বাতিলের দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ৩ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হেফাজতের কার্যনির্বাহী পরিষদের জরুরি বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আমির শাহ্ মুহিদুল্লাহ বাবুনগরী।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ বাদ দিয়ে বহুত্ববাদের মতো ইসলামবিরোধী মতবাদ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা এই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি এবং সংবিধানে পূর্বের মূলনীতি পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে নারীবিদ্বেষী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা সরাসরি ইসলাম কটাক্ষের শামিল। এই প্রস্তাবনা, প্রস্তাবদাতা কমিশন এবং প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত প্রস্তাব বাস্তবায়নের ঘোষণাও বাতিলের দাবি জানাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম।
মামুনুল হক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “৩ মের মধ্যে এসব প্রস্তাব বাতিল করা না হলে সোহরাওয়ার্দীর মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
সংগঠনটি আরও দাবি জানায়— ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর গণহত্যা এবং ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় আন্দোলনে নিহতদের বিচার, ফ্যাসিবাদী আমলে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ভারতীয় ওয়াকফ আইন সংশোধন এবং ফিলিস্তিনে মুসলমানদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণ।
মহাসমাবেশ সফল করতে আগামী মঙ্গলবার থেকে এক সপ্তাহব্যাপী গণসংযোগ এবং ২৫ এপ্রিল (শুক্রবার) বাদ জুমা দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। এতে বর্তমান সংবিধানে থাকা জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে সুপারিশ করা হয়।
অন্যদিকে, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন সম্প্রতি তাদের প্রস্তাবনায় অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করে, যা হেফাজতের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে।