|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০২ জুন ২০২৫ ১২:৫৮ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৬ মে ২০২৫ ০৪:৩৩ অপরাহ্ণ

চিলমারীর অগ্রযাত্রায় নৌ-বন্দর ও হরিপুর তিস্তা সেতুর গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা


চিলমারীর অগ্রযাত্রায় নৌ-বন্দর ও হরিপুর তিস্তা সেতুর গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা


হাবিবুর রহমান, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ-


 

কুড়িগ্রামের চিলমারীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। ২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী নদীবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজ বাস্তবায়ন করছে ‘ডিজি বাংলা’ ও ‘স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির উপ-প্রকৌশলী আবু দাউদ সরকার জানান, প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হচ্ছে যাত্রী ও মালবাহী টার্মিনালসহ আধুনিক নদীবন্দর।

 



 

বর্তমানে প্রায় আড়াই একর জায়গায় কাজ চলমান রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নির্মাণকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে যাত্রী টার্মিনাল ভবনের ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে এবং পরিদর্শন ভবন ও বন্দর ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলমান।
 

এ উন্নয়নকে ঘিরে চিলমারী জুড়ে তৈরি হয়েছে নতুন আশার আলো। স্থানীয় ব্যবসায়ী শামীম মিয়া, দৌল্লা মিয়া, নুর আমিন, আঃ রহিম, বিপ্লব মিয়া ও আঃ রাজ্জাক জানান, বন্দরের কাজ শেষ হলে তাদের পণ্য বিক্রি কয়েক গুণ বাড়বে এবং চিলমারীর অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন প্রসারিত হবে, তেমনি কর্মসংস্থানও বাড়বে।
 

চিলমারীর বিভিন্ন সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী মনে করেন, নদীর তীরে পর্যটন কেন্দ্র কিংবা রিসোর্ট নির্মিত হলে এলাকাটি পর্যটন সম্ভাবনাও অর্জন করতে পারবে। এতে করে স্থানীয় অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
 

চিলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান শাহিন বলেন, “নৌ-বন্দর চালু হলে চিলমারী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। এতে কুড়িগ্রাম জেলা ও জাতীয় অর্থনীতিও উপকৃত হবে।”
 

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত নৌ-প্রটোকলের আওতায় নৌপথে পণ্য পরিবহন চুক্তি ছিল। ব্রিটিশ আমলেই চিলমারী থেকে কলকাতা, গৌহাটি ও আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ-যোগাযোগ চালু ছিল। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা হ্রাস, অব্যবস্থাপনা এবং আধুনিকায়নের অভাবে ঐতিহ্যবাহী চিলমারী নদীবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়।
 

পুনরায় এ বন্দর চালুর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চিলমারী সফরে এসে একে নদীবন্দর হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান রমনা ঘাটে পল্টুন স্থাপন করে নদীবন্দর উদ্বোধন করেন। ২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী নৌ-রুটে ফেরিঘাট ও ফেরি সার্ভিস চালুর পাশাপাশি বন্দরের উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
 

বিআইডব্লিউটিএ উপ-প্রকৌশলী আবু দাউদ সরকার জানান, “চিলমারী নদীবন্দর বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক একটি প্রকল্প। এর উন্নয়নে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বরাদ্দে কাজ চলমান রয়েছে।”
 

অন্যদিকে, ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১,৪৯০ মিটার দীর্ঘ চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতুটি চিলমারীর উন্নয়নে আরেকটি বড় মাইলফলক হতে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, পারভেজ মিয়া, সবুজ মিয়া প্রমুখ জানান, সেতুটি চালু হলে চিলমারী ও হরিপুরের মধ্যে সংযোগ দৃঢ় হবে এবং এলাকার চরাঞ্চলের ধান, গম, পাট, ভুট্টা, ডাল, সবজি ও অন্যান্য ফসল দেশের বিভিন্ন স্থানে সহজে পরিবহন করা সম্ভব হবে। এতে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন, চাষাবাদ বাড়বে এবং নতুন চাষিরা উদ্বুদ্ধ হবেন।
 

তারা আরও জানান, সেতুর দুই পাশে বাজার গড়ে উঠার পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা গড়ে উঠলে এই অঞ্চলটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপ নিতে পারে। হাজারো বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, “নৌ-বন্দর ও সেতু চালু হলে চিলমারী জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল হয়ে উঠবে। সরকার কিংবা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্যোগে এখানে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে, যা কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নে গতি আনবে।”


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫