ঢাকা প্রেস নিউজ
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদপ্তরে সংঘটিত মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ১৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া এই নৃশংস ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। এই বেদনাদায়ক দিনটিকে সরকার ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
শহীদদের স্মরণে বনানীর সামরিক কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ৯টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিজিবি মহাপরিচালক এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া সারাদেশে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি।
এদিকে, ক্ষমতার পালাবদলের পর এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি নতুন করে জোরালো হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার মূল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যেখানে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্পৃক্ততার পাশাপাশি বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথাও ওঠে আসে। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার সাত সদস্যের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক আ ল ম ফজলুর রহমান। কমিশন ইতোমধ্যে সেনাসদস্যসহ অন্তত ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। meanwhile, পিলখানা হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত মামলার রায় দিয়েছে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট, যা এখন আপিল বিভাগের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় এখন পর্যন্ত ২৮৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, পরবর্তী শুনানি ১৩ মার্চ নির্ধারিত রয়েছে।
সরকার ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সরকারি ছুটি ব্যতীত দিবসটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পরিপত্রের ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, দিবসটি উপলক্ষে বিজিবির বিভিন্ন স্থাপনায় রেজিমেন্টাল পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং সব সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবেন। পাশাপাশি শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় পিলখানায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
দেশের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এই বিদ্রোহে পিলখানায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। এ ছাড়াও নারী ও শিশুসহ আরও ১৭ জন নিহত হন। জাতি আজ এই বেদনাবিধুর ঘটনার শিকার শহীদদের স্মরণ করছে এবং প্রকৃত সত্য উন্মোচনের অপেক্ষায় রয়েছে।