রাখাইনে মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশই একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ঢাকা প্রেস-নিউজ ডেস্ক:-
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের ফলে মানবিক সংকট দিন দিন গভীর হচ্ছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ একযোগে মানবিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করছে। সংঘাতের কারণে অন্যান্য সব রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, বাংলাদেশই এখন সেখানে সহায়তা পৌঁছানোর একমাত্র কার্যকর বিকল্প।
বুধবার দুপুর ২টায় রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, জাতিসংঘ তাদের নিজস্ব চ্যানেলের মাধ্যমে রাখাইনে ত্রাণ বিতরণ করবে এবং বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দেবে। বাংলাদেশের বিশ্বাস, এই সহায়তা রাখাইনের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে।
তিনি জানান, রাখাইনে চরম মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (UNDP) পূর্বাভাস অনুযায়ী সেখানে এক ধরনের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ আশঙ্কা করছে, এই সংকট আরও রোহিঙ্গাকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধ্য করতে পারে।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এর চেয়েও বেশি সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে এই বিশাল জনগোষ্ঠী আমাদের জন্য একটি গুরুতর বোঝায় পরিণত হয়েছে।"
রাখাইনে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের মানবিক তৎপরতার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্মতি এবং কিছু পূর্বশর্ত পূরণ আবশ্যক। যেমন, সহায়তাদাতা ও গ্রহীতাদের অবাধ প্রবেশাধিকার, সহায়তা প্রদান প্রক্রিয়ায় বৈষম্য না করা, ত্রাণকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করা এবং সংঘর্ষ বিরতি বজায় রাখা।”
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চান, বাংলাদেশ কি আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং জান্তা সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাচ্ছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, “আরাকান বাহিনী যখন সীমান্তবর্তী এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়, তখন পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেয়। সীমান্ত নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষা আমাদের দায়িত্ব।”
রোহিঙ্গাদের আরও আগমন ঠেকাতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে রাখাইনে সংঘর্ষ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে প্রবেশের হার কমেছে, তবে আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় করছি যাতে নতুন বাস্তুচ্যুতি রোধ করা যায়।”
ড. খলিলুর রহমান আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকার আরাকান বাহিনীকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, রাখাইনে যেন আর কোনো রোহিঙ্গা নিপীড়ন, সহিংসতা বা বাস্তুচ্যুতি না ঘটে। একইসঙ্গে, আরাকান বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনসহ সকল আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। বিশ্ব সম্প্রদায় তাদের কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।”
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে কি না, তা নির্ভর করবে তাদের কার্যক্রমের ধরন এবং তারা রোহিঙ্গাদের কতটা প্রতিনিধিত্ব করছে তার ওপর।”
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫