সংস্কার হচ্ছে না উপজেলা সড়ক, ভোগান্তিতে মানুষ

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাটের আদর্শ মোড় থেকে তিনকোণা পর্যন্ত সাড়ে ৩০০ মিটারের সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না। ওই সড়কে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। খানাখন্দে ভরা সড়কটি এখন মানুষের চলাচলের অযোগ্য।
সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। সড়কের পিচ ও ইটের খোয়া উঠে গিয়ে ছোটবড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাধ্য হয়ে কাদাযুক্ত বৃষ্টির পানি মাড়িয়ে লোকজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলাচল করছেন। ওই সড়কে যানবাহন চলাচলের সময় পানির ছিটা পথচারীর শরীরে যাচ্ছে।
সড়কের দুই পাশে স্থাপনা থাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। এ পানি শুকাতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগে।
স্থানীয় বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বালারহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বালারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুরুষাফেরুষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাফল্য কিন্ডারগার্টেন, আশা ও গ্রামীণ ব্যাংক ও গজেরকুটি ও বালাতাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বালারহাট বিজিবি ক্যাম্প এই সড়ক দিয়েই যেতে হয় এবং ওই সড়কের পাশেই নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ।
প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন সড়কটি দিয়ে। স্কুল-কলেজ যাতায়াতের সময় সড়কের কাদাপানি ছিটকে পোশাক-পরিচ্ছদে পড়ে নষ্ট হওয়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সব সময় অভিভাবকরা থাকছেন চরম দুশ্চিন্তায়। মোটরসাইকেল, অটোভ্যান, অটোরিক্সা, বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রায়শই ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
অন্য দিকে বালারহাট বাজারের পশ্চিম দিকে নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নাওডাঙ্গা ভূমি অফিস ও বালারহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, গরু ও সুপারি পট্টী, বালারহাট ডিএস দাখিল মাদরাসা যাওয়ার মূল সড়কটির অবস্থা খুবই করুণ। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানিতে পরিণত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ হাজারও পথচারী।
বালারহাট বাজারের ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম রেজা, পিটন পাল, আবু তারেক ও রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘বালারহাটর সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গরবার হাট বসে। বালারহাটে পশ্চিমে অযোগ্য সড়কের পাশেই বসে গরু, ছাগল ও সুপারির হাট৷ কাপড়-চোপড়।’
‘অন্য দিকে নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে ধান, আসবাবপত্র, হাঁস-মুরগি ও সাইকেলসহ সব ধরনের জিনিস এই বাজারে বেচাকেনা হয়। দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এই বাজারে। এই বাজার থেকে সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পায়। অথচ সামান্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পাকা সড়কে পানি জমে থাকছে। চেয়ারম্যান, মেম্বররা এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিনই যাতায়াত করেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না,’ বলেন তারা।
আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শুভশ্রী রায়, তানজিলা আক্তার ও নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী হিয়ামনি জানান, ‘প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। বিকল্প সড়ক না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কাদাযুক্ত সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি। বৃষ্টির সময়তো একদমই চলাচলের অনুপযোগী থাকে। এমনকি বর্ষা ছাড়াও শুষ্ক মৌসুমেও ঝুঁকিপূর্ণ থাকে।’
নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার ও বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘শুধু আমাদেন দুই প্রতিষ্ঠানে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই সড়ক দিয়ে প্রতিষ্ঠানে আসে। এছাড়াও আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করছেন।’
এই দুই অধ্যক্ষ আরও জানান, বর্ষা মৌসুম এলেই বালারহাটের এই দুই স্থানে এতো বেশি ভোগান্তি হয়, যা বলা বাহুল্য। আমরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রুত সংস্কারের আবেদন জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী বলেন, ‘বালারহাটের পশ্চিমে জামে মসজিদ সংলগ্ন ২০০ মিটার ও বালারহাট তিন কোণা মোড় থেকে আদর্শ মোড় পর্যন্ত ২০০ মিটার সড়ক দুটি এলজিইডি অফিসের আওতাভুক্ত।’
‘এরমধ্যে নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন থেকে আদর্শ মোড় পর্যন্ত ১০০ মিটার সড়কটি জেলা পরিষদের আওতাভুক্ত। কয়েক দফায় চলাচলের অযোগ্য সড়কের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একদিকে সড়ক সংস্কার না হওয়া, অন্য দিকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে কাদাযুক্ত হাঁটুপানি জমে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়ক। তার পরপরও ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ হাজারও পথচারী, ব্যবসায়ী চলাচল করছেন। তিনিও দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রহমান জানান, ‘বালারহাট বাজারের ইউনিয়ন পরিষদের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন সড়ক যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করা যায়, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আজকালের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫