|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২২ মে ২০২৩ ০৫:০৪ অপরাহ্ণ

ভেজাল পণ্যের ব্যবসা গুরুতর পাপ


ভেজাল পণ্যের ব্যবসা গুরুতর পাপ


দানীং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ভেজাল প্রসাধনী তৈরি ও বিপণনের খবর পাওয়া যায়। যেখানে দেখা যায় বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের মোড়ক ব্যবহার করে ভেজাল প্রসাধনী বিপণনের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এমনকি এসব নকল পণ্য ব্যবহার করে অনেকের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। অধিক মুনাফার আশায় এভাবে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না।

কোনো ব্যক্তি কি এমন আছে যে সে চাইবে তার সন্তান বা পরিবার নকল প্রসাধনী ব্যবহার করে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হোক? তাহলে কোনো ব্যক্তি কিছু মুনাফার আশায় কিভাবে অন্যদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়! যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, আল্লাহকে ভয় করে, তারা এমন প্রতারণা করতে পারে না। কারণ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর কসম! তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না সে নিজের ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ না করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে থাকে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৫০১৭)

তাই যারা যেকোনো মূল্যে মুনাফা কামানোর নেশায় প্রতারণার আশ্রয় নেয়, তারা মূলত নিজেদের দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই হারায়। একদিকে তারা মানুষকে প্রতারিত করে তাদের হক নষ্ট করে, অন্য দিকে তারা মানুষকে কঠিন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়ে প্রকৃত মুসলমানের খাতা থেকে নিজেদের নাম কাটিয়ে নেয়।


যেহেতু রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২৭)

এ ছাড়া অবৈধ পন্থায় উপার্জনের কারণে তাদের রিজিকের বরকত উঠে যায়। কেননা রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে, তাকে বরকত দান করা হয়।


আর যে ব্যক্তি অসংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে সে এমন ব্যক্তির ন্যায় যে আহার করে কিন্তু তৃপ্ত হয় না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৯৫)


অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের ইখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা বা বাতিল করা)। যদি তারা সত্য বলে এবং অবস্থা ব্যক্ত করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে, আর যদি মিথ্যা বলে এবং দোষ গোপন করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়। (বুখারি, হাদিস : ২০৭৯)

ব্যবসা-বাণিজ্য ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মহৎ কাজ। কিন্তু অবৈধ পন্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য এতটাই নিন্দনীয় যে নবীজি (সা.) প্রতারক ব্যবসায়ীদের নিজের উম্মত বলেই স্বীকার করেন না।


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে বিক্রি করছ? তখন সে তাঁকে এ সম্পর্কে জানাল। ইতিমধ্যে তিনি এ মর্মে ওহিপ্রাপ্ত হলেন, আপনি আপনার হাত শস্যের স্তূপের ভেতরে ঢোকান। তিনি স্তূপের ভেতরে তাঁর হাত ঢুকিয়ে অনুভব করলেন যে তার ভেতরের অংশ ভেজা। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করে তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫২)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘অভিশপ্ত সে, যে কোনো মুমিনের ক্ষতি করে অথবা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪০)

যারা পণ্যে ভেজাল কিংবা রাসায়নিক মেশায় তারা কিন্তু মূলত দেশের সমস্ত জনগণের ক্ষতি করে, যার মধ্যে বেশির ভাগই মুমিন। তাই যারা এ ধরনের ব্যবসায় জড়িত আছে, তাদের উচিত, এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা, মহান আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা করা।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫