জয়পুরহাট প্রতিনিধি:-
অবশেষে নারীদের ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলো জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। ফাইনাল ম্যাচে ঢাকা জেলা প্রমিলা ফুটবল দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জয়পুরহাট জেলা। আজ বুধবার বিকেল ৩টায় খেলা শুরু হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে খেলা উপভোগ করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান কমল, এবং জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এসএম রাশেদুল আলম সবুজ।
ম্যাচ শেষে জয়পুরহাট দলের কোচ কানাই চন্দ্র দাস বলেন, "আমাদের একটাই চাওয়া—এই খেলা যেন বন্ধ না হয়। নারীরা খেলাধুলার মাধ্যমেও সমাজে এগিয়ে যাচ্ছে।"
এর আগে ২৮ জানুয়ারি, নারী ফুটবল খেলা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে একদল ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লি’ মাঠে হামলা চালিয়ে টিনের বেড়া ভাঙচুর করে, যার ফলে খেলা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিলকপুরের টি স্টার ক্লাবের উদ্যোগে তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠটি টিন দিয়ে ঘেরাও করে প্রায় দেড় মাস ধরে ফুটবল খেলা চলছিল। ক্লাবের সভাপতি উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান ইমন। প্রতিটি ম্যাচের জন্য মাটিতে বসে ৩০ টাকা ও চেয়ারে বসে ৭০ টাকা মূল্যে টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, তিলকপুর রেলস্টেশনের সামনে স্বাধীনতা চত্বরে মুসল্লি ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জমায়েত হন। সেখানে একাধিক মওলানা বক্তব্য দেন। তাদের একজন বলেন, "মেয়েদের ঘরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহতালা। অথচ এখানে নারীদের মাঠে নামানো হচ্ছে, যা যুবসমাজের জন্য অনৈতিক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করছে।" তিনি আরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, "নারীদের খেলা বন্ধ না হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।"
পরবর্তীতে, ওই দলটি স্লোগান দিতে দিতে তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গিয়ে টিনের বেড়া ভাঙচুর করে।
৩১ জানুয়ারি, মাঠের বেড়া ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা ক্ষমা চান এবং অঙ্গীকার করেন যে, ভবিষ্যতে নারীদের খেলাধুলায় বাধা দেবেন না। এতে খেলার স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয় এবং আজকের ম্যাচ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
নারীদের খেলাধুলার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং খেলোয়াড়দের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের আরও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।