লাব্বাইক ধ্বনির ভালোবাসা

প্রকাশকালঃ ২৮ মে ২০২৩ ১২:৩২ অপরাহ্ণ ৮৮ বার পঠিত
লাব্বাইক ধ্বনির ভালোবাসা

মুসলমানের অন্তরে রয়েছে মহান আল্লাহর প্রতি বিশেষ ভালোবাসা। প্রতিদিন নামাজ পড়ার মাধ্যমে এই প্রেম উষ্ণতা ছড়ায়। তবে তা অন্তরের উত্তাপের তুলনায় খুবই সামান্য। আত্মার ক্ষুধা ও হূদয়ের আকুতি মেটাতে মুসলমানরা রমজান মাসে রোজা রাখে।

রোজাদারের অন্তরে এর প্রভাবও খুবই সামান্য। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রমজান মাসের রোজা এবং প্রতিবছরের জাকাত আদায়ের পরও মুসলিমের এমন এক বসন্তের মৌসুম দরকার, যখন প্রিয়ার সাক্ষাত্ ঘটবে। তাই বন্দিত্বের শিকল ভেঙে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রেম কাছে টেনে নেয় সবাইকে। ভালোবাসায় ভরপুর নতুন এই জগতে সবাই তাঁর মহিমা গাইতে থাকে।


সবার কণ্ঠে বেজে ওঠে ভালোবাসার লাব্বাইক ধ্বনি। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।

মূলত প্রেমের এই ডাক মুমিনের অন্তরে অন্য রকম ঝড় তৈরি করে। স্বাভাবিক জীবনযাপনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে।

অস্থির জীবনের স্বাদ আর কেমন হয়? ব্যক্তির প্রিয় অভ্যাস ও প্রিয় জিনিস ছেড়ে দিয়ে স্রষ্টার প্রেমের নিমগ্ন থাকার স্বাদ কি সবাই অনুভব করে? তখন অন্তরের গভীরে তাওহিদ ও ঈমানে স্বাদ উপলব্ধি করা যায়। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজালি (রহ.) অত্যন্ত চমত্কার ভাষায় হজের আধ্যাত্মিক রহস্যের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় ঘরকে একটি রাজার সদৃশ করেছেন, যেখানে ভূপৃষ্ঠের নানা প্রান্ত থেকে পথিকের আগমন ঘটে। সবার অন্তরে ঘরের মহান অধিপতির আনুগত্য ও প্রেম পরিপূর্ণ থাকে। তাঁর দাসত্ব ও ইবাদতে তৈরি হয় পূর্ণ নিষ্ঠা ও অবিচলতা। (ইহইয়াহউ উলুমুদ্দিন, পৃষ্ঠা : ২৫০/১)।


তাই হজের কার্যক্রমে এমন কিছু কাজ রয়েছে, যা স্বাভাবিক বলে মনে হয় না। এর যৌক্তিক কারণও খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন—পাথর নিক্ষেপ, সাফা ও মারওয়ার মধ্য দিয়ে চলা ইত্যাদি। তবে এসব কাজের মাধ্যমে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য ও তাঁর নির্দেশনা পালিত হয়। শরিয়তের অন্যান্য বিধি-বিধানের কিছু মৌলিক লক্ষ্য রয়েছে, যা মানুষের যুক্তিতেও সায় দেয়। যেমন—অন্যের সহযোগিতার জন্য জাকাত দেওয়া, কুপ্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ করতে রোজা রাখা, আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করতে নামাজে রুকু ও সিজদা করা। অন্যদিকে সাফা ও মারওয়া সায়ি করা, পাথর নিক্ষেপ করাসহ হজের পুরো কার্যক্রমে মানুষ যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পায় না। এখানে মানুষের সাধারণ যুক্তি বা বিবেক-বুদ্ধির কোনো স্থান নেই। শুধু আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় নবী (সা.)-এর নির্দেশনা অনুকরণ করেই এসব কাজ করা হয়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, লাব্বাইক বিহাজ্জাতিন হাক্কান, তাআব্বুদান ওয়া রিক্কান অর্থাত্ হে আল্লাহ, আমি উপস্থিত। আপনার কাছে যথার্থ হজ, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত ও পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য প্রার্থনা করছি। (আল-হাবি, পৃষ্ঠা : ৯৭)

অর্থাৎ হজের পুরো কার্যক্রম পালনের মাধ্যমে পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ পায়। আর তিনি এমন কথা হজ ছাড়া অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে বলেননি। মূলত আল্লাহর নিয়ম হলো মানবজাতির সব কাজ তাঁর নির্দেশনার অনুসরণের ভিত্তিতে হবে। তাঁর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে দাসত্বের স্বীকৃতি মিলবে। আর হজের পুরো কাজ তাঁরই ভালোবাসায় ভরপুর। তাই এতে এমন কিছু কাজ করতে হয়, যা বাহ্যিকভাবে অস্বাভাবিক মনে হয়।

আল-আরকানুল আরবাআ থেকে