কুড়িগ্রামে সাংবাদিকদের ত্রাণ উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন বর্জন

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীকের সংবাদ সম্মেলনসহ সফর কর্মসূচি বর্জন করেছেন কুড়িগ্রামের সংবাদিকরা। বুধবার (১২ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। তবে নানা অভিযোগ তুলে সেই সংবাদ সম্মেলন বর্জন করেন সাংবাদিকরা।
বুধবার কুড়িগ্রাম সফরে এসেছেন ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও উপদেষ্টার প্রথমবারের মতো কুড়িগ্রাম সফর। তবে উপদেষ্টার এই সফর ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতমিনিময় নিয়ে জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের আগে থেকে অবহিত করেনি জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। পরে বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপদেষ্টার সফর কর্মসূচি ও সংবাদ সম্মেলন সংক্রান্ত পত্র কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে পৌঁছে দেয় জেলা প্রশাসন।
বেলা সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ঢুকতে না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত সম্মেলন বয়কট করেন তারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন– কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান টিউটর, এখন টিভির জেলা প্রতিনিধি ও কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মমিনুল ইসলাম মঞ্জু, মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি আশরাফুল হক রুবেল, সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি বাদশা সৈকত, ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি তুহিন, এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম, দীপ্ত টিভির ইউনুস আলী, সমকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সুজন মোহন্ত, নাগরিক টিভির ফজলুল করিম ফারাজি, দেশ টিভি ও দেশ রূপান্তর পত্রিকার জুয়েল রানা, দৈনিক বিজয় বাংলাদেশ ও দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আনোয়ার সাঈদ তিতুসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জেলার কর্মরত সাংবাদিকরা।
স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা বলছেন, সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের একজন উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় সফর হলেও জেলা প্রশাসন আগে থেকে গণমাধ্যমকে জানায়নি। কয়েক ঘণ্টা আগে সংবাদ সম্মেলনের কথা বলা হয়েছে। এরপরও দায় থেকে সাংবাদিকরা সম্মেলনস্থলে গিয়েছিলেন। সাংবাদিক নামধারী ভুঁইফোড় ও কথিত দুই-একজন ব্যক্তিকে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করানো হলেও জেলার মূলধারার সাংবাদিকদের অপেক্ষায় রাখা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন ও সফর কর্মসূচি বর্জন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য ও মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি আশরাফুল হক রুবেল বলেন, ‘নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও সাংবাদিকদের অপেক্ষায় রেখে সাক্ষাৎ দেওয়া হয়নি। সাংবাদিক নামধারী অপসাংবাদিকতায় জড়িত দুই একজন ফেসবুক সর্বস্ব ব্যক্তিকে নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে মিটিং করা হয়েছে। যারা পেশাদার ও মূলধারার সাংবাদিক তাদের ঘণ্টাব্যাপী বাইরে অপেক্ষায় রাখা হয়েছিল। এজন্য আমরা সবাই মিলে উপদেষ্টার কর্মসূচি বয়কট করেছি।’
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান টিউটর বলেন, ‘জেলা প্রশাসন প্রকৃত ও মূলধারার সাংবাদিকদের পাস কাটিয়ে চলছে। যারা ফেসবুকসর্বস্ব সাংবাদিকতা করেন, জেলা প্রশাসকের স্তুতিবাক্য গায় তাদের সম্মেলন কক্ষে নেওয়া হলেও মূলধারার পেশাদার সাংবাদিকদের বাইরে অপেক্ষায় রাখা হয়েছিল। নির্ধারিত সময় পার হলেও সাংবাদিকদের সাক্ষাৎ দেওয়া হয়নি। এজন্য প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা উপদেষ্টার কর্মসূচি বর্জন করেছি।’
একই দাবি করেন প্রেসক্লাব সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টার প্রোগ্রামে মূলধারার সাংবাদিকদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। ডেকে নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা উপদেষ্টার কর্মসূচি বর্জন করেছি।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল স্যার (উপদেষ্টা) অফিসারদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন। কিন্তু এর মধ্যে দেখলাম কিছু সাংবাদিক ভেতরে ঢুকলেন, বক্তব্য দিলেন। জিনিসটা বুঝলাম না কী হলো না হলো।’
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে কোনও দূরত্ব নেই। দূরত্ব কেন থাকবে? ঠিক আছে আমি আপনাদের নিয়ে আমি বসবো। আপনারা কীভাবে চান, আমাদের কাছে কী প্রত্যাশা করেন। আসেন বসেন, আমি সেভাবে কাজ করবো। দূরত্বের কোনও বিষয় নেই।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বুধবার সকাল ১১টায় কুড়িগ্রামে পৌঁছান। এরপর জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে তিনি জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বেলা সাড়ে ১২টায় স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও সাংবাদিকরা তা বর্জন করেন। পরে উপদেষ্টা তার অন্যান্য কর্মসূচির জন্য জেলা প্রশাসন চত্বর ত্যাগ করেন। দিনভর কর্মসূচি শেষে বুধবার সন্ধ্যায় তার কুড়িগ্রাম ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫