ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে জেলবন্দি ৭ জেলে

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
জিঞ্জিরাম নদী হয়ে ভারতে মাছ ধরতে গিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় হাজতে আটক রয়েছেন কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুরের ৭ জেলে। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে হাজতে আটক রয়েছেন তারা। তাদের ফেরানো নিয়ে চিন্তায় রয়েছে তাদের পরিবার।
২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর তাদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তবাহিনী বিএসএফ। এরপর থেকে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি ভারতের আমপাতি জেলার মাহিন্দগঞ্জ থানার তুরা মেঘালয় থানা এলাকার এক বাসিন্দার মাধ্যমে গোপনে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে তাদের সন্ধান মেলে।
আটক জেলেরা হলেন, চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের হরিনের বন্দ এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫), রমনা ব্যাপারী পাড়া এলাকার বাহাদুর মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫), শামছুল হকের ছেলে মীর জাহান আলী (৪৫), মৃত এছাহক আলীর ছেলে বকুল মিয়া (৩২), পকের আলীর ছেলে আমির আলী (৩৫) ও রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী ব্যাপারী পাড়ার জরিফ উদ্দিনের ছেলে আঙ্গুর হোসেন (২০), রৌমারী উপজেলার যাদুর চর বকবান্ধা এলাকার ছলিম উদ্দিনের ছেলে চাঁন মিয়া (৬০)।
রমনা মডেল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুকুনুজ্জামান স্বপন বলেন, হাজতে আটককৃতরা পেশায় জেলে। তারা দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে বৈধভাবে ভারতে গিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা বৈধভাবে যেতে না পেরে অবৈধভাবে মাছ ধরতে গিয়ে আটক হন।
এদিকে গোপনে স্ত্রীকে পাঠানো মীর জাহান আলীর চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, বর্তমানে তারা মেঘালয়ের কালাইর চর পেট্রোল থানা আমপাতিতে রয়েছেন। চলতি মাসে তাদেরকে হাজত থেকে ছাড়িয়ে নিতে না পারলে তাদের স্থায়ী সাজা দেওয়া হবে।
এদিকে হাজতে আটক জানার পর থেকে জেলে পরিবারগুলো উৎকণ্ঠতায় দিন কাটাচ্ছে।
আটক জেলেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছরের ৩ নভেম্বর ভারতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি ভারতের আমপাতি জেলার মাহিন্দগঞ্জ থানার তুরা মেঘালয় থানা এলাকার এক বাসিন্দার মাধ্যমে গোপনে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে তাদের সন্ধান মেলে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, তাদের সন্ধান পাওয়ার পর চেয়ারম্যান, ইউএনও ও ডিসি মহোদয়ের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তাদের ছাড়িয়ে আনতে আশ্বাস দিয়েছেন।
আটক জেলে মীরজাহানের স্ত্রী ববিতা বেগম বলেন, ঘরে খাবার নেই। কোনোরকম টেনে টুনে সংসার চালাতে হয় বলে মাছ শিকার করতে চলে যায়। পরে জানতে পারি তারা ভারতে আটক হয়েছে। সন্তানদের মুখে ঠিকভাবে খাবার দিতে পারছি না। বড় সন্তানকে বাবার বাড়িতে রেখে আসছি।
কাজলী বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ, নদীতে মাছ শিকার করাই প্রধান পেশা। প্রতি বছর তার স্বামী বৈধভাবে ভারতে গেলেও এবার ৩ নভেম্বর মাছ শিকার করতে গিয়ে ভারতে আটক হন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের একটি গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছি। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।
রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আঁকা বলেন, ভারতীয় হাজতে আটককৃতরা রাজীবপুরের জিঞ্জিরাম নদীর সীমান্ত এলাকা থেকে আটক হন। আমরা ভুক্তভোগীদের যাবতীয় সহযোগিতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। জেলেদের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫