|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ০২:৩৪ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ১২ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:০৯ অপরাহ্ণ

পুঠিয়ায় আম চাষে ক্ষতি, কলা চাষে আশার আলো


পুঠিয়ায় আম চাষে ক্ষতি, কলা চাষে আশার আলো


মোঃ শফিকুল ইসলাম চারঘাট (রাজশাহী):

 


 

রাজশাহী জেলার পুঠিয়া একসময় বিখ্যাত ছিল সুস্বাদু আমের জন্য। তবে এখন চিত্র পাল্টেছে—আম চাষে লোকসান গুনে কৃষকেরা ঝুঁকছেন কলা চাষের দিকে। কম পরিশ্রম, তুলনামূলক কম খরচ ও বেশি মুনাফার কারণে দিনদিন এ অঞ্চলে কলা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে কলা এখন শুধু একটি কৃষিপণ্য নয়, অনেকের কাছে এটি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার নতুন পথ।
 

পুঠিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠে এখন ছড়িয়ে আছে নানা জাতের কলা—চাপা, অনুপম, সাগর, রঙিন সাগর, জ্বীন ও আনাজী কলা। সরকারি সহায়তা ও কৃষকদের আগ্রহে কলার ফলন যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে কৃষকদের আয়ও। শিক্ষিত তরুণরাও বেকারত্বের বিকল্প হিসেবে যুক্ত হচ্ছেন কলা চাষে।
 

বানেশ্বর ও ঝলমলিয়া—এই দুটি বড় কলার হাটে সপ্তাহে চার দিন বেচাকেনা হয় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার কাদি কলা। হাটের ইজারাদার জাক্কার ও শরিফুল জানান, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব কলা পাঠানো হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। স্থানীয় অর্থনীতিতে কলা এখন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
 

বালিয়াঘাটি গ্রামের সহকারী অধ্যাপক নুরুল হুদা জানান, “এই বছর সাত বিঘা জমিতে রঙিন সাগর কলা চাষ করে প্রায় ১৪ লাখ টাকা আয় করেছি। পাইকাররা জমি থেকেই কলা সংগ্রহ করেছে।”
বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, “তিন বিঘা জমিতে রঙিন সাগর কলা চাষ করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ করেছি।”
বেকার যুবক ইউসুফ আলী জানান, অন্যের সাত বিঘা জমি লিজ নিয়ে পাঁচ বিঘায় সাগর কলা চাষ করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।

 

বানেশ্বর হাটের পাইকার আলাউদ্দিন বলেন, “এবার কলার আমদানি ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে, ফলে ব্যবসায় ভালো লাভ হচ্ছে।”
 

কৃষক ইউসুফের হিসাবে, এক বিঘা জমিতে কলা চাষে খরচ হয় ৩৫–৫০ হাজার টাকা (নিজস্ব জমিতে), আর লিজকৃত জমিতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। সেই খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি বিঘা থেকে লাভ থাকে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো। তাঁর মতে, “কলা চাষে পরিশ্রম ও লেবার খরচ দুই-ই কম, তাই এটা সবচেয়ে লাভজনক।”
 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী দাস জানান, চলতি বছর পুঠিয়ায় প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভালো ফলন ও সন্তোষজনক দাম পাওয়ায় কৃষকরা অত্যন্ত উৎসাহিত।
 

কৃষিবিদদের মতে, পুঠিয়ার মাটি ও জলবায়ু কলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফলে এটি দ্রুত একটি সম্ভাবনাময় কলা উৎপাদন অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই রাজশাহীর পুঠিয়া পরিচিতি পাবে ‘কলার রাজ্য’ হিসেবে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫