আগুন দেখে ভয় না পেয়ে উল্টো ছুটে যান শিক্ষিকা মাহরীন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একে একে অন্তত ২০ শিক্ষার্থীকে নিরাপদে বের করে আনেন। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
তাঁর ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী এক আবেগঘন ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “মাহরীন আপু আর নেই। তিনি শুধু আমার বড় বোন ছিলেন না, ছিলেন আমার মায়ের মতো।” তিনি আরও জানান, মাহরীন মাইলস্টোন স্কুলে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আগুন লাগার পরও তিনি প্রথমে নিজেকে রক্ষা করেননি, যত বেশি সম্ভব শিক্ষার্থীকে বের করে আনার চেষ্টা করেছেন।
দগ্ধ অবস্থায় মাহরীনকে দ্রুত জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের শতভাগই পুড়ে গিয়েছিল। আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সোমবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মাহরীনের স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, “মাহরীনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব ঝলসে গেছে। শুরুতে ডাক্তার বলেছিলেন ৮০ শতাংশ বার্ন, কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিল ১০০ শতাংশ।” লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে শেষবারের মতো স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন মাহরীন। তখনও তাঁর চিন্তা ছিল শিক্ষার্থীদের নিয়ে। তিনি বলেন, “স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিলাম, তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আমি দগ্ধ হলেও বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।”
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাহরীন প্রথমেই ছুটে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম থেকে বের করে আনেন। অনেককেই হাত ধরে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। এক সময় আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে তিনিও আর বের হতে পারেননি।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, “সেনাবাহিনী আমাদের জানিয়েছে, অন্তত ২০ জন শিশু শিক্ষার্থী এই শিক্ষিকার কারণে বেঁচে গেছে। তিনি সত্যিকারের বীর ছিলেন।”
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছোঁয়ার মামা জানান, “আমি দেখি ছোঁয়ার চুল নেই, অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। পরে শুনি, এক ম্যাডাম তাকে আগুনের ভেতর থেকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে গেছেন।”
শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী রেখে গেছেন তাঁর দুটি ছেলে। তাঁর আত্মত্যাগ আজ আমাদের সবাইকে কাঁদিয়েছে, আবার মনে করিয়ে দিয়েছে—নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ কেমন হতে পারে। তিনি শুধু একজন শিক্ষিকা ছিলেন না, ছিলেন জীবনের শিক্ষক।