প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ৩৫ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের

প্রকাশকালঃ ০২ জুলাই ২০২৪ ০৩:১২ অপরাহ্ণ ৭৮৬ বার পঠিত
প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ৩৫ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের

সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষিত ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এ কারণে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের সব ক্লাস বন্ধ ছিল। নোটিশ দিয়ে স্থগিত করা হয় সবধরনের পরীক্ষাও। শিক্ষকদের পাশাপাশি কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

 

শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচিতে কার্যত গতকাল অচল ছিল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষকরা বলছেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। গত রবিবার দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে।


প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে এর মধ্যে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি থাকায় ফেডারেশনের ব্যানারে এই কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। এর বাইরে থাকা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানা গেছে।

 

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবন, হল, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও অনুষদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সর্বাত্মক কর্মবিরতির অংশ হিসেবে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সব রুটিন কাজ থেকে বিরত থেকেছেন তারা। সকাল ১০টা থেকেই কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ স্থবির হয়ে যায়। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষের প্রথম দিনের ক্লাস ২ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই ক্লাস আগে থেকেই স্থগিত করা হয়।


এদিকে রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে পাঠানো এক আদেশে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা।

 

একই অবস্থা দেখা গেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও (বুয়েট)। ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে এদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। শিক্ষকদের পাশাপাশি সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। কর্মবিরতির প্রথম দিন গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিভাগেই ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত থাকে। গতকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ সেশনের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। সর্বাত্মক কর্মবিরতির কারণে সেটি আর হয়নি।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষক সমিতিও। একই দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সভা করেছে ৩য় শ্রেণির কর্মচারী পরিষদ ও কারিগরি কর্মচারী পরিষদ। বেলা ১২ থেকে ১টা পর্যন্ত প্রথমে শিক্ষক কমপ্লেক্সে এবং পরে প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন করিডরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।

 

অন্যদিকে শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণায় প্রকৌশল গুচ্ছের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ধাপের ভর্তির তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ ও ১৫ জুলাই। এর আগে ৩ ও ৪ জুলাই চতুর্থ ধাপের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।