শেয়ার বাজারে আস্থা ফেরানো বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ

অব্যাহত দরপতনে দেশের শেয়ার বাজার এখন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি কমতে কমতে ৫ হাজার ২৩৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। যা বাজারকে তিন বছর আগের অবস্থানে নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাজার ছাড়ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু কেন এই আস্থাহীনতা? এ অবস্থার পরিবর্তনে আসন্ন বাজেটে শেয়ার বাজারের জন্য কী থাকা উচিত? বাজারসংশ্লিষ্টরা কী চান? যা শেয়ার বাজারকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। আস্থা ফেরাবে বিনিয়োগকারীদের!
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সবচেয়ে যেটা জরুরি তা হলো—শেয়ার বাজারের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করা। কারণ শেয়ার বাজার ঠিক না করলে অর্থনীতিতে গতি ফেরানো কঠিন হবে। তারা বলেছেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো শেয়ার বাজার। সেখানে বড় বড় উদ্যোগের পুঁজি আসছে এ খাত থেকে। কিন্তু আমাদের দেশে উলটো। এখানে ব্যাংক থেকে সব অর্থায়ন করা হয়।
শেয়ার বাজারকে যতদিন না অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে ততদিন এই বাজারের উন্নয়ন হবে না। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা যেমন ঠিক। একইভাবে সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি তা হলো, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) বাজার থেকে কারসাজি দূরকরণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, কারসাজি দূর না করলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ এ প্রসঙ্গে গতকাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু এর মধ্যেও কারসাজি থেমে নেই। তাহলে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে কি করে? তিনি বলেন, এখানে বন্ধ কোম্পানির শেয়ারের দরও হুহু করে বাড়ে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তো এ বিষয় জানার কথা নয়। এসব বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক অধ্যাপক বলেন, আমাদের শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কয়টি কোম্পানি খুব ভালো মানের?
যেখানে বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে পারেন? এসব বিষয় নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে। কারণ ভালো কোম্পানি না থাকলে বাজার টিকবে না। সেই সঙ্গে বাজারকে বাজারের গতিতে চলতে দিতে হবে। আবু আহমেদ বলেন, আসন্ন বাজেটে মূলধনি মুনাফার (ক্যাপিটাল গেইন) ওপর করারোপের যে বিষয়টি শোনা যাচ্ছে তা যেন না হয়। কারণ, বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা সেখানে মূলধনই রক্ষা করা যাচ্ছে না। মূলধনি মুনাফার ওপর কীভাবে কর দেবে বিনিয়োগকারীরা?
পুঁজিবাজারের জন্য কেমন বাজেট চাই? এ প্রসঙ্গে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয়ের প্রথম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের বাইরে রাখা উচিত। এটা করা হলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার মারাত্মক তারল্যসংকটে ভুগছে। বাজেটে এ বিষয়টি বিবেচনা করলে তা বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের ওপর কর অব্যাহতি চাচ্ছি। বর্তমানে, করপোরেট বন্ড বাজারের আকার খুব ছোট হওয়ায় এটি পুঁজিবাজারের পাশাপাশি অর্থ বাজারে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। একটি প্রাণবন্ত বন্ড বাজার, অর্থনীতিকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করতে পারে। যদি সব ধরনের বন্ডে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়, তাহলে এটি একটি প্রাণবন্ত বন্ড বাজার প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত করবে, যা শিল্প স্থাপনে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে অর্থসংস্থান কার্যক্রম সহজ করবে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য আমরা এ খাতে অতিরিক্ত কোনো ধরনের করারোপ চাই না। তিনি বলেন, সিকিউরিটিজ লেনদেনের মূল্য পরিশোধ কালে আমাদের ০.০৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। সেখানে এ করের হার আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে মাত্র ০.০২ শতাংশ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রেক হোল্ডার কোম্পানিগুলোর প্রধান রাজস্ব (অর্থাৎ টার্নওভার) কমিশন আয় থেকে এত বেশি হারে ট্যাক্স আরোপ করার ফলে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছায়েদুর রহমান এ প্রসঙ্গে গতকাল বলেন, আমরা বলছি, পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে। কিন্তু তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ ব্যবধান। এটি কমপক্ষে ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ করতে হবে। এতে বহুজাতিক এবং দেশিও ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উত্সাহিত হবে।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫