ট্রাম্প-নেতানিয়াহুকে ‘আল্লাহর শত্রু’ ঘোষণা, ইরানের শীর্ষ আলেমের ফতোয়া

অনলাইন ডেস্ক:-

 

ইরান-ইসরায়েলের টানা ১৩ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটলেও উত্তেজনার আগুন এখনও নিভেনি। যুদ্ধ থামলেও চলছে বাকযুদ্ধ, পাল্টাপাল্টি হুমকি আর আক্রমণাত্মক বক্তব্য। এই প্রেক্ষাপটেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ধর্মীয় ফতোয়া জারি করেছেন ইরানের প্রখ্যাত শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজী।
 

সোমবার (৩০ জুন) ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজ এজেন্সি এই তথ্য প্রকাশ করে।
 

ফতোয়ায় ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে ‘আল্লাহর শত্রু’ আখ্যায়িত করে মুসলিম বিশ্বকে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আয়াতুল্লাহ শিরাজী। তিনি বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্র যদি ইসলামের কোনো শীর্ষ ধর্মীয় নেতাকে হুমকি দেয়, তবে তাকেও আল্লাহর শত্রু হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’
 

তিনি আরও ঘোষণা দেন, ইসলামি রাষ্ট্রসমূহের পক্ষ থেকে এ ধরনের শত্রুদের প্রতি সহযোগিতা বা সমর্থন হারাম তথা নিষিদ্ধ। মুসলিমদের উচিত এসব শত্রুর অন্যায় ও অপরাধের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া এবং তাদের অনুতপ্ত করা।
 

শিরাজী বলেন, ‘যদি কোনো মুসলমান ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের পথে বাধার সম্মুখীন হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সে সৃষ্টিকর্তার রাস্তায় সংগ্রামী মুজাহিদের মর্যাদা লাভ করবে।’ তিনি ইসলামি সমাজকে শত্রুর অশুভ কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনাও জানান।
 

এদিকে, ইরানের আরেক শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ হোসেইন নুরি হামেদানিও ফতোয়াটির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘শিয়া মারজায়ে তাকলিদ বা ইসলামী উম্মাহর কোনো নেতার ওপর হামলা মানে ইসলামের ভিত্তিমূল এবং মুসলমানদের অস্তিত্বের ওপর আঘাত। এই আক্রমণের জবাব দেবে বিশ্ব মুসলিম ও ইরানের ঈমানদার জাতি।’
 

তিনি ট্রাম্পকে আক্রমণ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই প্রেসিডেন্টের কালো অধ্যায়ে খুন, দখল ও ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি নৃশংস ইহুদিবাদী সরকারকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন এবং ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।’
 

হামেদানি আরও বলেন, ‘মার্কিন এই সন্ত্রাসী সরকার জানুক—তাদের হুমকি আমাদের মনোবল ভাঙবে না। বরং এসব হুমকি ইসলামী উম্মাহর ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করবে।’
 

ইসরায়েলের স্বীকারোক্তি ও মার্কিন হুমকি

সম্প্রতি যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ স্বীকার করেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল তাদের, কিন্তু সুযোগ পাননি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘সুযোগ পেলে তাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতাম।’
 

অন্যদিকে সংঘাত চলাকালীন সময়ে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা জানি খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন, তবে এখনই তাকে হত্যা করছি না।’
 

ঘোষণা ছাড়াই ইরানে ইসরায়েলি হামলা

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন রাতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এক সামরিক অভিযানে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় নিহত হন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি, জ্যেষ্ঠ কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ এবং দশজন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ ৬০০ জনের বেশি মানুষ।
 

এই হামলার জবাবে ইরান শুরু করে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’। এতে তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতি বড় হলেও হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
 

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পাল্টা হামলা ও যুদ্ধবিরতি

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ২১ জুন রাতে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর জবাবে ২৩ জুন রাতে তেহরান কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়।
 

পরের দিন (২৪ জুন) দুপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরান ও ইসরায়েল একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে’ পৌঁছেছে। যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ট্রাম্পের এই দাবি সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন।
 

অবশেষে ২৪ জুন দুপুর ১২টার কিছু পরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে, যার কিছুক্ষণ পরেই ইরানের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।