ভারতের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব, নিরাপত্তা ইস্যুতে কড়া প্রতিবাদ
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে বৈঠকে তিনি উপস্থিত হন।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতের নয়াদিল্লি, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোকে ঘিরে উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ তলব করা হয়। বৈঠকে এসব ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় এবং বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশন ও ভিসা সেন্টারগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের জন্য ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
গত ১০ দিনের মধ্যে এটি দ্বিতীয়বার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হলো। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে এ নিয়ে অন্তত ছয়বার ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সোমবার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কনস্যুলার ও ভিসা সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। হাইকমিশনের ফটকে টাঙানো নোটিশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন এবং শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা সেন্টারের কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ঢাকা ও দিল্লির সূত্রগুলো জানায়, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ, ভিসা সেন্টারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার পর দেশটির বিভিন্ন শহরে অবস্থিত বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশন ও ভিসা সেন্টারগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকট হয়ে ওঠে।
এরই ধারাবাহিকতায় কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশন এবং শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা সেন্টারের সামনে একাধিক সংগঠন বিক্ষোভ করে। শিলিগুড়িতে বিক্ষোভকারীরা ভিসা সেন্টারে তালা লাগিয়ে দেয়। পাশাপাশি আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অনিবার্য কারণবশত ২৩ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ থাকবে।
এর আগে শনিবার রাতে ভারতের রাজধানী দিল্লির কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী। এ ঘটনার সংবাদ বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল একে ‘বিভ্রান্তিকর প্রচার’ বলে মন্তব্য করেন। তবে ভারতের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। উল্লেখ্য, গত ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাও ঘটে।
এদিকে কলকাতা ও শিলিগুড়িতে বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশের পতাকা-সংবলিত ফ্লেক্স ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। শিলিগুড়িতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কর্মীরা মিছিল শেষে ভিসা সেন্টারের সামনে অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর চালায় এবং ভিসা সেন্টার বন্ধ রাখার হুমকি দেয়। কলকাতায় উপহাইকমিশনের সামনে ‘নাস্তিক মঞ্চ’, জাতীয় কংগ্রেস এবং পরে বিজেপি ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ‘হিন্দু সনাতনীদের’ পৃথক বিক্ষোভ হয়।
এর আগে ১৪ ডিসেম্বর প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বাংলাদেশ। সে সময় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের ভারতে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে সহযোগিতা চাওয়া হয়। পাশাপাশি ভারতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়। এর জবাবে ১৭ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়।
ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে পাল্টাপাল্টি তলবের এই ঘটনাগুলো দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বলে কূটনৈতিক মহলে মনে করা হচ্ছে।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫