ঢাকা প্রেস
সিরাজুল ইসলাম রতন,গাইবান্ধা প্রতিনিধি:-
মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহে উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা জেলায় শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপ বাড়ছে। বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি। আকাশ ঢেকে ছিল ঘন কুয়াশায়, যা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছিল। হিমেল হাওয়ার কারণে তীব্র শীত অনুভূত হয়। দিনভর সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলতে দেখা যায়।
সকালে তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দুপুরে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলেও বিকেলের দিকে নেমে আসে ১৯ ডিগ্রিতে। সূর্যের অনুপস্থিতিতে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শ্রমজীবী মানুষের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদী বেষ্টিত ১৬৫টি চরাঞ্চলের বাসিন্দারা শীতের প্রকোপে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শহর ও উপজেলা এলাকাতেও মানুষের চলাচল কম। শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীরা গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। অনেক শিশুকে গরম কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। কেউ স্যালাইন নিচ্ছেন, আবার কারও শরীরে নেবুলাইজার দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে জায়গার সংকটে বারান্দায় শয্যা বিছিয়ে রোগীদের রাখা হয়েছে।
গ্রামের চিত্রও একই। শীত নিবারণের জন্য অনেকেই বাড়ির উঠোনে আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকছেন। পাটের চট দিয়ে গবাদিপশু ঢেকে রাখা হয়েছে। চায়ের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ছে।
সদর উপজেলার দক্ষিণ বারুইপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি আব্দুর রহমান ভুট্টো বলেন, “শীতের কষ্টে রাতে ঘুম আসে না। কোনোভাবে রাত কাটাই। সকালে ঠান্ডা বেশি থাকে, আগুন জ্বালিয়ে সময় কাটাতে হয়।”
একই গ্রামের মজিরন খাতুন জানান, “দুই মেয়েকে কাঁথা মুড়িয়ে রাত কাটাই। সন্ধ্যা থেকে আগুন জ্বালিয়ে থাকি।”
জেলা ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার ৪টি পৌরসভা ও ৮২টি ইউনিয়নের শীতার্তদের মধ্যে ২১ হাজার ৪০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের কম্বল কেনার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শীতের তীব্রতা ও রোগের প্রাদুর্ভাবে গাইবান্ধার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। শীতার্ত মানুষ স্বস্তির আশায় দিন কাটাচ্ছেন।