চার মাস চিকিৎসা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরেছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কাতার আমিরের দেওয়া বিশেষ বিমানে করে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই পুত্রবধূ—ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান।
বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সকাল ১১টার পর গুলশানের ‘ফিরোজা’ বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হয়। পথে পথে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে জড়ো হন লাখো নেতাকর্মী। প্রচণ্ড ভিড় ও উচ্ছ্বাসের মধ্যে আড়াই ঘণ্টায় তিনি গুলশানে পৌঁছান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের এই প্রত্যাবর্তন ঘিরে দলের পক্ষ থেকে এক বিশাল শোডাউনের আয়োজন করা হয়, যা দীর্ঘদিন পর নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, “এটি শুধু আবেগের বিষয় নয়, রাজনৈতিক শক্তিরও প্রকাশ।”
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, তিনি এখন শারীরিকভাবে কিছুটা অবসন্ন হলেও মানসিকভাবে সুস্থ। দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন তিনি।
লন্ডনের ১৭ দিনের ক্লিনিক চিকিৎসা শেষে তিনি তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। দেশে ফেরার আগে হিথ্রো বিমানবন্দরে আবেগঘন পরিবেশে মায়ের সঙ্গে বিদায় নেন তারেক রহমান।
বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান প্রমুখ। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফিরেছেন চিকিৎসক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, তাবিথ আউয়ালসহ ১৪ জন।
গুলশানে ‘ফিরোজা’ বাসভবনকে প্রস্তুত করা হয় তাঁর জন্য। সেখানকার নিরাপত্তা জোরদার করে সেনা, র্যাব, পুলিশ ও সিএসএফ। গাড়ি থেকে নেমে খালেদা জিয়াকে হেঁটে বাসায় প্রবেশ করতে দেখা যায়, দুই পাশে ছিলেন তাঁর দুই পুত্রবধূ।
১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। তাঁর আগমনে স্বজনদের মাঝে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বাবার ধানমন্ডির ‘মাহবুব ভবন’ বাসায় উঠেছেন, যা নতুন করে সজ্জিত করা হয়েছে। দেশে ফেরার পরই অসুস্থ মাকে দেখতে যান স্কয়ার হাসপাতালে।
খালেদা জিয়াকে একনজর দেখতে বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত পথে পথে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। ব্যানার, ফুল, জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে হাত নাড়ে শুভেচ্ছা জানান।
যানজট এড়াতে তাঁর গাড়িবহর বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে। নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে ফুটপাতে দাঁড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকেই গাড়িবহরের সঙ্গে ছুটে যান। ভিড় সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে দেখা গেছে।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার প্রসঙ্গে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, “খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।” তিনি কাতার সরকারের বিশেষ সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। ২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেলেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে তাঁর মুক্তি নিশ্চিত হয় এবং মামলা থেকে অব্যাহতি পান। এ প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করল।