|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৬ জুন ২০২৩ ১২:০২ অপরাহ্ণ

নেক আমলের অসিলায় দোয়া করা ইসলামে বৈধ


নেক আমলের অসিলায় দোয়া করা ইসলামে বৈধ


নিজের যেকোনো নেক আমলের অসিলায় দোয়া করা ইসলামে বৈধ। এবং এমন দোয়া মহান আল্লাহ দ্রুত কবুল করেন। যেমন—হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একটি সিয়াম পালন করেছি, তুমি এই সিয়ামের অসিলায় আমাকে ক্ষমা করো ইত্যাদি। এমন অসিলা গ্রহণ করা জায়েজ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, অতএব তুমি আমাদের পাপ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৬)

তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘হে আমাদের রব! আপনি যা নাজিল করেছেন তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা রাসুলের অনুসরণ করেছি। অতএব, আমাদের সাক্ষ্যদাতাদের তালিকাভুক্ত করুন।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ৫৩)


মহানবী (সা.) তিন ব্যক্তির ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যাঁরা পথিমধ্যে কোনো এক গুহায় ঠাঁই নেন। হঠাৎ পাহাড় থেকে একখণ্ড পাথর পড়ে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাঁরা কোনোভাবেই গুহা থেকে বের হতে পারছিলেন না। তখন তাঁরা নিজেদের সৎ আমলের অসিলায় মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, ফলে গুহার মুখ থেকে পাথর সরে গিয়েছিল।

প্রথম ব্যক্তি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা খুব বৃদ্ধ ছিলেন। আমি কখনো তাঁদের আগে আমার পরিবার-পরিজনকে কিংবা দাস-দাসীকে দুধ পান করাতাম না। একদিন কোনো একটি জিনিসের তালাশে আমাকে অনেক দূরে চলে যেতে হয়। কাজেই আমি তাঁদের ঘুমিয়ে পড়ার আগে ফিরতে পারলাম না। আমি তাঁদের জন্য দুধ দোহন করে নিয়ে এলাম। কিন্তু তাঁদের ঘুমন্ত পেলাম।


তাঁদের আগে আমার পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীকে দুধ পান করতে দেওয়াটাও আমি পছন্দ করিনি। তাই আমি তাঁদের জেগে ওঠার অপেক্ষায় পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এভাবে ভোরের আলো ফুটে উঠল। এরপর তাঁরা জাগলেন এবং দুধ পান করলেন। হে আল্লাহ! যদি আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এ কাজ করে থাকি, তবে এ পাথরের কারণে আমরা যে বিপদে পড়েছি, তা আমাদের থেকে দূর করে দিন। ফলে পাথর সামান্য সরে গেল। কিন্তু তাতে তাঁরা বের হতে পারলেন না।

দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। সে আমার খুব প্রিয় ছিল। আমি তার সঙ্গে দৈহিক মিলনে লিপ্ত হতে চাইলাম। কিন্তু সে বাধা দিল। এরপর এক বছর ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সে আমার কাছে (সাহায্যের জন্য) এলো। আমি তাকে ১২০ দিনার দিলাম এ শর্তে যে সে আমার সঙ্গে একান্তে মিলিত হবে, তাতে সে রাজি। আমি যখন সম্পূর্ণ সুযোগ লাভ করলাম, তখন সে বলল, আমি তোমাকে অবৈধভাবে মোহর ভাঙার (সতীত্ব হরণের) অনুমতি দিতে পারি না। ফলে সে আমার সর্বাধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি তার সঙ্গে মিলিত হওয়া পাপ মনে করে তার কাছ থেকে ফিরে এলাম এবং আমি তাকে যে স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছিলাম, তা-ও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তবে আমরা যে বিপদে পড়েছি তা দূর করো। তখন সেই পাথরটি (আরো একটু) সরে গেল। কিন্তু তাতে তাঁরা বের হতে পারছিলেন না।

তৃতীয় ব্যক্তি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমি কয়েকজন দিনমজুর নিয়োগ করেছিলাম এবং আমি তাদের মজুরিও দিয়েছিলাম। কিন্তু একজন লোক তার প্রাপ্য না নিয়ে চলে গেল। আমি তার মজুরির টাকা কাজে খাটিয়ে তা বাড়াতে লাগলাম। তাতে প্রচুর ধন-সম্পদ অর্জিত হলো। কিন্তু কিছুকাল পর সে আমার কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আমার মজুরি দিয়ে দাও। আমি তাকে বললাম, এসব উট, গরু, ছাগল ও গোলাম, যা তুমি দেখতে পাচ্ছ, তা সবই তোমার মজুরি। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সঙ্গে বিদ্রূপ না করে আমার মজুরি দিয়ে দাও। তখন আমি বললাম, আমি তোমার সঙ্গে মোটেই বিদ্রূপ করছি না। তখন সে সবই গ্রহণ করল এবং নিয়ে চলে গেল। তা থেকে একটাও ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ! আমি যদি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজ করে থাকি, তবে আমরা যে বিপদে পড়েছি, তা দূর করো। তখন সে পাথরটি সম্পূর্ণ সরে পড়ল। তারপর তারা বেরিয়ে এসে পথ চলতে লাগল। (বুখারি, হাদিস : ২২৭২)


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫