মো: আমিনুল ইসলাম:-
পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন (পরিচিতি ও তথ্য যাচাই প্রতিবেদন) বাতিল করা হচ্ছে। এতদিন এ কাজ পরিচালনা করত পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। তবে এখন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন পাসপোর্ট ইস্যুর মূল ভিত্তি হিসেবে ধরা হবে। যদি এ দুটি নথি সঠিক থাকে, তবে পাসপোর্ট পেতে আর কোনো বাধা থাকবে না। সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১৬ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণে ঝুলে আছে। অনেক সময় এই প্রতিবেদনের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়, যা ভ্রমণ, চিকিৎসা কিংবা জরুরি প্রয়োজনে বিদেশ গমনকারীদের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, "পাসপোর্ট পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। এ জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ইংল্যান্ডসহ উন্নত দেশগুলোতে পাসপোর্ট আবেদন করলে এটি সরাসরি ডাকযোগে পৌঁছে যায়।"
অনেক আবেদনকারী পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে নানা ধরনের হয়রানি ও ঘুষ প্রদানের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়, যদিও আইনত এর কোনো বিধান নেই।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণে চাকরি কিংবা পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবাগ্রহণে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাইয়েরও অভিযোগ উঠেছে। এটি নাগরিকদের হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই পরিস্থিতি নিরসনে আজ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পুলিশের বিশেষ শাখাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশ ভেরিফিকেশন পুরোপুরি বাতিলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
পুলিশ সংস্কার কমিশন গত ১৯ নভেম্বর সুপারিশ করেছে যে, চাকরি ও পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত। কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেন, "ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ করা জরুরি। প্রার্থীর বা তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক পরিচিতি বিচার করা অযৌক্তিক।"
নাগরিকদের হয়রানি কমানো এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজতর করতে পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।