ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
দুই পরিবারের সম্মতিতে গত জুলাই মাসের ১৬ তারিখ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে হয় রাশিদুল ইসলাম (২১) ও আশামণি (১৮) দম্পতির। বিয়ের তিন মাস পর তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার স্বপ্ন ছিল রাশিদুলের। কিন্তু সেই স্বপ্ন হঠাৎ করেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো তার। বৈষম্যবিরোধেী আন্দোলনে যোগ দিয়ে গত ৫ আগস্ট সকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শ্রবজীবী রাশিদুল ইসলাম।
রাশিদুলের স্থায়ী নিবাস কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের কাঠগীরাই গ্রামে। বাবার নাম বাচ্চু মিয়া। রাশিদুল ঢাকার যাত্রাবাড়ির আদমজী গার্মেন্টেসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
রাশিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে চলছে মাতম। বাড়ির পাশের কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
রাশিদুলের ভাবি মৌসুমি খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী আলমগীর হোসেনসহ আমরা ঢাকায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় থাকি। আমার স্বামী রিকশা চালান।
আমি একটি গার্মেন্টে কাজ করি। আমার ছোট দেবর পাঁচ দিন আগে আমাদের এখানে এসেছে। বিয়ে করে ‘আদমজী গার্মেন্টস’ নতুন চাকরি নেয় সে। সেখানে দুই দিন ডিউটি করেছে। এর মধ্যে এত কিছু ঘটল।
মৌসুমি খাতুন জানান, গত ৫ আগস্ট রাশিদুল সকাল ৬টায় গার্মেন্টসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বাড়ি থেকে বের হন। তখন বাইরে গোলাগুলি হচ্ছিল, তাই সে আধাঘণ্টা পর বাসায় ফিরে আসেন। পরে সকাল ১১টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে মিছিলে যোগ দেন। পরে তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নিহতের মেজো ভাবি মুন্নী বেগম বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে আমার কাছে রাশেদুলের নম্বর থেকে ফোন আসে। আমাকে এক অপরিচিত ব্যক্তি বলেন, রাশিদুলের আপনি কে হন? আমি বলি তার ভাবি। আমাকে জানানো হয়, সে মিছিলে পুলিশের গুলি খেয়েছে। আমরা তাকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করিয়েছি। তার বর্তমান অবস্থা আশঙ্কাজনক। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসেন।’
মুন্নী বেগম আরো বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে বিকেলে ঢাকা মেডিক্যালে যাই। মর্গে আমরা রাশিদুলের লাশ দেখতে পাই। ডাক্তার জানান, তার (রাশিদুলের) মাথায় ও বুকে মোট তিনটি গুলি লেগেছিল।’
রাশিদুলের স্ত্রী আশামনি বলেন, ‘আমার স্বামী আমাকে তার সঙ্গে নিয়ে যাবে বলে কথা দিয়েছিল। তিন মাস পরে তার আসার কথা। কিন্তু পাঁচ দিন পর ফিরে এলো লাশ হয়ে। সে এখন কোনো কথা কয় না, আমার দিকে চেয়ে দেখে না। সবাই কয়, সে নাকি এখন লাশ। এই লাশ দিয়ে আমি কী করব? আপনারা আমার স্বামীকে আমার কাছে ফেরায় দেন।’
নিহতের মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘কী দোষ করেছিল আমার ছেলে, কী অপরাধ তার? আপনারা তাকে গুলি করে মারলেন কেন? আমার কলিজার টুকরাটা এভাবে শুইয়া রইছে কেন? আয় বাপধন এই অভাগী মায়ের কোলে ফিরে আয় বাপ।’
এলাকাবাসী আলী হোসেন বলেন, ‘আমার প্রতিবেশী ভাতিজা রাশিদুল। তার বাবা একজন দরিদ্র মানুষ। সে ২১দিন আগে বিয়ে করেছে। আমি শুনেছি সে ঢাকায় মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। সে খুব ভালো ছেলে ছিল। আমরা তার মৃত্যুর বিচার চাই।’