ঢাকা প্রেস,জয়পুরহাট প্রতিনিধি:-
অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিন থেকেই গ্রামবাংলায় ফসল তোলার ধুম পড়ে। কৃষকরা ঘরে তোলেন নতুন ধান, আর শুরু হয় নবান্ন উৎসব। কৃষিমুখী মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে, যদিও যান্ত্রিক জীবনযাত্রার প্রভাবে এখন এসব দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। তবুও, এখনও অনেক গ্রামে টিকে আছে নবান্নের রীতি। এরই ধারাবাহিকতায় জয়পুরহাট জেলার কালাই পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বসেছে মাছের মেলা।
এ মেলায় সাজানো হয়েছে কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, ব্ল্যাককার্প, গ্রাসকার্প, কার্ফু, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ নানা ধরনের মাছ। ভোর থেকেই মাছের দোকানগুলি সাজিয়ে বসেছে, আর চলছে হাঁকডাক ও দরদাম। ৫ কেজি থেকে ১৮ কেজি পর্যন্ত বড় মাছের দাম ৩০০ থেকে ১,২০০ টাকা প্রতি কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও রোববার (১৭ নভেম্বর) নবান্ন উৎসব উপলক্ষে পাঁচশিরা বাজারে বসেছে মাছের মেলা। কালাই পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ৯০-১০০টি গ্রামের মানুষ মেলায় অংশগ্রহণ করেন।
এ উৎসবে প্রতি পরিবারে স্বজনদের বিশেষ করে জামাই-মেয়েদের আগে থেকে নিমন্ত্রণ করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ মাছ কিনতে মেলায় আসেন। ক্রেতারা উৎসাহের সঙ্গে কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, ব্ল্যাককার্প, গ্রাসকার্প, কার্ফু, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ বিভিন্ন মাছ কিনছেন। তবে, এই মেলায় শুধু মাছ কেনার জন্য নয়, জামাই-মেয়েদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা চলে। শ্বশুররা নীরবে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
এই অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে পাঁচশিরা বাজারে বসে প্রায় অর্ধবর্ষের এই মাছের মেলা। দিনভর চলতে থাকে মাছ কেনা-বেচার উৎসব। অর্ধশতাধিক দোকানে সাজানো মাছের পসরা। ক্রেতারা দাম হাঁকছেন, মাছ কিনছেন, আবার অনেকে সেলফি তুলতেও ব্যস্ত। কিছু লোক ফেসবুকে মাছ মেলার ছবি পোস্ট করে ঝড় তুলছেন। এই মাছের মেলায় বিভিন্ন ধরনের পণ্যও পাওয়া যায়, আর ক্রেতারা খালি হাতে ফিরছেন না। তারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন, এবং মেলার আশপাশের গ্রাম-মহল্লায় উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করছে।
মেলায় আসা পারভিন আক্তার বলেন, "আমার বিয়ের পর থেকেই আমি প্রতিবছর এই মেলা দেখতে আসি। এবারে আমরা আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করেছি। এবার ১২ কেজি কাতলা মাছ কিনেছি।"
কালাই উপজেলার মাত্রাই গ্রামের বাসিন্দা মো. আতিকুর রহমান জানান, "এই মাছের মেলা আমাদের কাছে ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দের। জামাই, ভাগ্নি জামাইদের দাওয়াত করেছি, তারা বাড়িতে এসেছে।"
কালাই উপজেলার আকন্দপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. এনামুল আকন্দ বলেন, "এই ঐতিহ্যবাহী মেলা শুধু মাছের জন্য বিখ্যাত নয়, এখানকার ধান-আলুও খুব ভালো হয়, তাই আশপাশের লোকজন মেলায় ছুটে আসে।"
মাছ বিক্রেতা আব্দুল লতিফ জানান, "এ মেলায় বড় পুকুর, দিঘি এবং নদী থেকে বিভিন্ন জাতের বড় মাছ আনা হয়েছে।"
আরেক মাছ বিক্রেতা মো. রনি বলেন, "প্রতিবছরই আমি এখানে মাছ বিক্রি করতে আসি। বর্তমানে সবকিছুর দাম বেড়েছে, তবে মাছের বাজারে তুলনামূলক দাম বেশি হলেও ক্রেতারা আনন্দে মাছ কিনছেন।"
মাছ ব্যবসায়ী জহুরুল, এনামুল হক ও আলমগীর হোসেন জানান, "এ মেলায় প্রচুর লোক আসে, তবে বিক্রি তুলনামূলক কম। তবুও বিক্রি হওয়া মাছের দাম স্বাভাবিক ছিল, আর ক্রেতাও ছিল বেশি।"
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, "প্রতিবছর এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবের পরিবেশ থাকে। এ বছরও ৪০-৫০টি স্টলে অন্তত ১ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হবে। আমরা কঠোর নজরদারি রাখছি যেন কেউ বিষযুক্ত মাছ বিক্রি না করে।"