|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫৬ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৪ জুলাই ২০২৩ ০২:১৪ অপরাহ্ণ

ইসলামে অভিভাবকহীন বিবাহ সংঘটিত হয় না


ইসলামে অভিভাবকহীন বিবাহ সংঘটিত হয় না


সলামী দৃষ্টিতে বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অভিমত ও অনুমতি গুরুত্বপূর্ণ। এক হাদিসে এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অভিভাবক ছাড়া বিবাহ সংঘটিত হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১০১; আবু দাউদ, হাদিস : ২০৮৩)

এর কারণ হলো, বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক নারীর সার্বিকভাবে পরিপূর্ণ জ্ঞান হয় না এবং চিন্তা-ভাবনা ত্রুটিযুক্ত হয়ে থাকে।


তাই তাদের চিন্তা কখনো কখনো কল্যাণকর পথে তাদের পথপ্রদর্শন করতে না-ও পারে। এ জন্য অভিভাবকদের সম্মতির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বংশীয় মর্যাদা পারিবারিক বন্ধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে, সে বংশমর্যাদা সংরক্ষণ করবে না।

আবার কখনো ‘কুফু’ ছাড়া বিয়ে উৎসাহী হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বংশের অপমান অনিবার্য। তাই অভিভাবককে এ ক্ষেত্রে কিছু অধিকার দেওয়া হয়েছে। স্মরণ রাখতে হবে, অভিভাবকহীন বিয়ে বা গোপন বিয়ে অসামাজিক, অমানবিক, অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ ও লজ্জাজনক কাজ।

এ জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ইসলাম পছন্দ করে না। আপনাদের এত বিপত্তির পেছনে আছে গোপন বিয়ে! ইসলামের নির্দেশনা হলো, বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিব আল-জুমাহি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দফ বাজানো ও ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে (বিয়েতে) হালাল ও হারামের পার্থক্য।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৮৯৬; তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৮)


আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বিয়ের ঘোষণা দেবে, বিয়ের কাজ মসজিদে সম্পন্ন করবে এবং এতে ঢোল পিটাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৯)

বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি কেন জরুরি—এ বিষয়ে আল্লামা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) ‘আহকামে ইসলাম আকল কি নজর মে’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন :

১. অভিভাবকের অনুমতি জরুরি হওয়ার কারণ হলো, বিবাহের ক্ষেত্রে নারীদের সার্বিকভাবে পরিপূর্ণ জ্ঞান হয় না এবং তাদের চিন্তা-ভাবনা ত্রুটিযুক্ত হয়ে থাকে। তাই তাদের চিন্তা কখনো কখনো কল্যাণকর পথে তাদের পথপ্রদর্শন করতে নাও পারে। এ জন্য অভিভাবকদের সম্মতির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


২. বংশীয় মর্যাদা পারিবারিক বন্ধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে, ওই বংশমর্যাদা সংরক্ষণ করবে না। আবার কখনো ‘কুফু’ ছাড়া বিবাহে উৎসাহী হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বংশের অপমান অনিবার্য। তাই অভিভাবককে এ ক্ষেত্রে কিছু অধিকার দেওয়া হয়েছে। যাতে এ অনিষ্টতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৩. মানুষের সাধারণ রীতি হলো, নারীর ওপর পুরুষ দায়িত্বশীল হয়। আর সব ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পুরুষের হাতে ন্যস্ত হয়। সব খরচ পুরুষের ওপর অর্পিত হয়। এ কারণেও নারীর বিবাহের ক্ষেত্রে তার পিতা-মাতার সম্মতি গুরুত্বপূর্ণ।

৪. বিবাহের মধ্যে অভিভাবকের শর্ত নির্ধারণের কারণে অভিভাবকের মর্যাদা ও সম্মান সমুন্নত হয়েছে। এই সম্মান কালক্রমে আজকের বধূও পাবে। তা ছাড়া অভিভাবকহীন বিবাহে নারী অবহেলার শিকার হয় এবং অভিভাবকের বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়।


৫. অভিভাবকের মাধ্যমে বিয়ে হলে বিয়ের কথা বেশি প্রচারিত হয়। প্রচারের মাধ্যমে বিবাহকে ব্যভিচার থেকে পার্থক্য করা জরুরি। প্রচারের উত্তম পদ্ধতি হলো, নারীর অভিভাবক বিবাহে উপস্থিত থাকবে। এতে বিবাহ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে অভিভাবকহীন বিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় হলেও কেউ অভিভাবককে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করে ফেললে এ ক্ষেত্রে বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে, এখন এই বন্ধন রক্ষা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। কেননা বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়; বরং এটি হলো, আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত ও নির্দেশিত নারী-পুরুষের সারা জীবনের একটি চিরস্থায়ী পূত-পবিত্র বন্ধন। ইসলামে তালাকের সুযোগ রাখা হয়েছে খুবই অপছন্দনীয়ভাবে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক যখন তিক্ত পর্যায়ে চলে যায় এবং সমাধানের কোনো পথ থাকে না, তখনই তালাক দেওয়া হয়ে থাকে। তার পরও ইসলামে তালাক একটি জঘন্যতম বৈধ কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) তা চরমভাবে ঘৃণা করতেন। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল হলো তালাক।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৭)

এ জন্য অতীব প্রয়োজন (যা শরিয়তে ওজর বলে গণ্য) ছাড়া স্বামীর জন্য তালাক দেওয়া জায়েজ নয়, স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া বৈধ নয়। যেহেতু তালাক স্বামীর অধিকার, তাই বিশেষত স্বামী এ ক্ষেত্রে নিছক মা-বাবার চাপ বা বলপ্রয়োগের কারণেও তা প্রয়োগ করতে পারবে না। কারণ সৃষ্টির আনুগত্যের সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন,  ‘অসৎকাজে আনুগত্য নয়; আনুগত্য শুধু সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭১৪৫)


সুতরাং কেউ গোপনে বিয়ে করে ফেললে মা-বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা জরুরি। আপনি তাদের সঙ্গে অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ করেছেন, তা তাদের কাছে স্বীকার করে নিন। পাশাপাশি এটাও বুঝিয়ে বলুন যে আপনি তাদের সঙ্গে যে অন্যায় আচরণ করেছেন, এর শাস্তি আপনি পেতে পারেন; আপনার স্ত্রী নয়। এর প্রতিকার হিসেবে তালাকের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে তা হবে আরেকটি অন্যায়।

এর পরও যদি তারা তালাকের কথা বলে, তাহলে দেখুন, তাদের কথা সঠিক ও যুক্তিসংগত কি না? যদি তাদের কথা সঠিক ও যুক্তিসংগত হয় এবং সে কারণে তালাক ছাড়া আর কোনো পথ বাকি না থাকে, পাশাপাশি যদি তালাক প্রদান করার দ্বারা আপনার জিনা-ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে মাতা-পিতার সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে। আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বলেন, আমার একজন স্ত্রী ছিল। যাকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা (যৌক্তিক কারণে) তাকে পছন্দ করত না। তিনি আমাকে বলেন তাকে তালাক দিতে। কিন্তু আমি তালাক দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। তখন আমার পিতা রাসুল (সা.)-এর কাছে বিষয়টি (যুক্তিসহ) উপস্থাপন করলে রাসুল (সা.) বলেন, তাকে তালাক দিয়ে দিতে। ফলে আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিই। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৪৭১২, আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৩৮)

পক্ষান্তরে তালাকের কারণ যদি যৌক্তিক না হয়, শুধু বউয়ের প্রতি ঈর্ষাবশত হয়, তাহলে তালাক দেওয়া জায়েজ হবে না।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫