বিয়ে নবীজি (সা.)-এর অন্যতম সুন্নত। চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা ও হালালভাবে বংশবিস্তারের মাধ্যম। নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের বিয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এটা এমন এক সুন্নত, যা মানুষের জীবনে সাধারণত একবারই পালন করার সুযোগ হয়, তাই উম্মতের উচিত, নবীজি (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক বিয়ে করা।
বিয়ের সুন্নতসম্মত পদ্ধতি হলো, ছেলে-মেয়ে উভয় পক্ষের পরামর্শক্রমে শরিয়তবিরোধী কুপ্রথামুক্ত বিয়ের আয়োজন করা, যাতে কমপক্ষে দুজন সাক্ষী উপস্থিত থাকবে এবং বিয়ে পরিচালনাকারী খোতবা পাঠের পর উভয় ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুলের (গ্রহণ) আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। উভয় পক্ষের সামর্থ্য ও সম্মান অনুপাতে মোহর ধার্য করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলামী শরিয়ত। বিয়ের আকদ মসজিদে করা সুন্নত। আকদের পর উপস্থিত মানুষের ভেতর কিছু খেজুর বিতরণ করা উত্তম।
এরপর কনেকে বরের হাতে সমর্পণ করবে। বাসরযাপনের পর বরপক্ষ সামর্থ্য অনুযায়ী ওলিমা করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৯, আদ্দুররুল মুখতার : ৩/৮-২১)
বিয়েতে অহেতুক খরচ করা সুন্নতপরিপন্থী; বরং ইসলামের দৃষ্টিতে যে বিয়ে যত অনাড়ম্বর হবে, খরচ যত কম হবে, সে বিয়ে তত বরকতপূর্ণ হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৪৫২৯)
এ ছাড়া অপব্যয় ও অপচয় নিন্দনীয় কাজ। পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই।’ (বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)
যারা কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা মেনে বিয়ে-শাদিসহ দৈনন্দিন সব কাজ পরিচালনা করে, তাদের জীবনই বেশি সুখী হয়। এমনকি যাদের মধ্যে ঈমান পর্যন্ত নেই, তার পরও তাদের (নিজের অজান্তেই) কর্মকাণ্ড ইসলামের নিয়ম মোতাবেক হয়, তারাও দুনিয়াতের এর সুফল অনুভব করে।
সম্প্রতি ম্যারেজ ফাউন্ডেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, যে দম্পতিরা তাদের বিয়েতে হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের বৈবাহিক জীবন শুরু করে, তাদের বিয়ে বিচ্ছেদের ঝুঁকি বেশি থাকে। গবেষকদের মতে যে দম্পতিরা তাদের বিয়েতে ২০ হাজার পাউন্ডের বেশি খরচ করেছে, তাদের ১০ শতাংশের বিয়ে তিন বছরের মধ্যে ভেঙে গেছে। বিপরীতে যাদের বিয়েতে কম খরচ হয়েছে, বিয়ের অতিথির (বন্ধু ও পরিবার) সংখ্যা ১০ বা তার কম ছিল, তাদের বিয়ে অত্যন্ত এক দশক স্থায়ী হয়েছে। যার হার বিয়েতে অধিক খরচকারীদের তুলনায় কম। তবে গবেষকদের মতে, বিয়েতে অবশ্যই আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের দাওয়াত করা উচিত, যাতে বিবাহিত দম্পতির বিয়ের বিষয়টি সবার মধ্যে প্রচারিত হয়, যা তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দেবে, তবে খরচের বিষয়ে অহেতুক খরচ এড়ানো বাঞ্ছনীয়। (ডেইলি মেইল : https://shorturl.at/goE19)
উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটি যাদের ওপর গবেষণা চালিয়েছে, তারা বেশির ভাগ অমুসলিম হওয়ার কথা, তার পরও তাদের মধ্যে যারা বিয়েতে অহেতুক খরচ কম করেছে, তাদের সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি স্থায়ী হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। তার মানে তাদের দাম্পত্য জীবন অহেতুক খরচকারীদের তুলনায় কিছুটা হলেও সুখী ছিল।
তবে এর মানে এই নয় যে বিয়েতে একদমই খরচ করা যাবে না; বরং ইসলাম যতটুকু অনুমোদন দেয়, সুন্নতের নিয়তে ততটুকুই খরচ করা সওয়াবের কাজ। যেমন বিয়ের পরদিন স্বামী-স্ত্রী রাত যাপনের পর শুকরিয়াস্বরূপ স্বামী বা তার নিকটবর্তীদের পক্ষ থেকে মানুষকে খাওয়ানো সুন্নত, যাকে ওলিমা বলে। এতে বিরাট কোনো আয়োজনের প্রয়োজন নেই, অপচয় তো নয়ই, বরং প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা করাই আবশ্যক। এ ছাড়া আর অন্য কোনো খাবারের আয়োজন সুন্নতসম্মত নয়। (বুখারি, হাদিস : ২০৪৮)
তবে বিয়ে উপলক্ষে বরযাত্রী গমন ও মেয়ের বাড়িতে আপ্যায়ন যদি কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতাহীন এবং সানন্দে হয়, তাহলে তা বৈধ, অন্যথায় অবৈধ। কিন্তু বর্তমানে বরযাত্রী গমন ও মেয়ের বাড়িতে খাবারের আয়োজনের জন্য পারিবারিক ও সামাজিক চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা খুবই নিন্দনীয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি মেয়ের পরিবারের প্রতি অবিচার। সুতরাং এমন কাজ পরিহার করা উত্তম। (আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস : ১১৫৪৫, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ : ৭/৫২২)