|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০১ আগu ২০২৫ ০৩:২২ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ৩০ জুলাই ২০২৫ ০২:২৮ অপরাহ্ণ

কার্যকর সংস্কার না হলে স্বৈরাচার ফিরেই আসবে: ড. ইউনূস


কার্যকর সংস্কার না হলে স্বৈরাচার ফিরেই আসবে: ড. ইউনূস


চলমান রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, "শুধু উপরিতলের পরিবর্তন নয়, প্রয়োজন গভীর ও কার্যকর সংস্কার। নাহলে যাকে আজ আমরা স্বৈরাচার বলে ধিক্কার দিচ্ছি, কাল সে আবার ফিরে আসবে।"
 

গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর এক হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়।
 

ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের ভেতরেই এমন কিছু রয়ে গেছে, যা থেকে মুক্তি ছাড়া প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। এই অবস্থা থেকে জাতিকে উত্তরণের জন্য নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে।” তিনি জুলাই মাসকে “জাতির পুনর্জন্মের মাস” হিসেবে উল্লেখ করেন।
 

তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য কাজ করছি, যেখানে সব নাগরিক শান্তি, মর্যাদা ও গর্ব নিয়ে বসবাস করতে পারবেন।”
 

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারের অঙ্গীকার

গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “এই সহিংসতা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং পূর্ববর্তী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পরিচালিত। এটি শুধু নিন্দনীয় নয়, বরং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হওয়া উচিত।”
 

জাতিসংঘ ইতোমধ্যে একটি সুপারিশপত্র দিয়েছে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারও বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যেমন দণ্ডবিধি সংশোধন, গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগদান ও জাতিসংঘের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর।
 

জাতীয় ঐকমত্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন জরুরি

ড. ইউনূস বলেন, “আমরা এমন একটি জাতীয় ঐকমত্য গড়তে চাই, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি তৈরি করবে। জনগণের স্বার্থে এমন এক রাষ্ট্র চাই, যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতা কখনও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না।”
 

অন্যদের বক্তব্য

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (বিএনপি মহাসচিব) বলেন, “বিচার ও সংস্কার অবশ্যই দরকার। কিন্তু তা হতে হবে একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের অধীনে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমেই দেশের সমস্যার সমাধান সম্ভব।” তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে, তবে সবচেয়ে বড় কাজটি হচ্ছে সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ।
 

ডা. শফিকুর রহমান (জামায়াতের আমির) বলেন, “বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা জাতির জন্য বিপর্যয় হবে। আগে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, পরে নির্বাচন।” তিনি বলেন, “জুলাইয়ের শহীদ ও আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে জামায়াত সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”
 

আখতার হোসেন (এনসিপি) বিচার বিভাগ স্বাধীন করার জাতিসংঘের সুপারিশকে সমর্থন জানান এবং দোষীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
 

গোলাম রহমান, শহীদ নাফিসের পিতা বলেন, “আমার ছেলের হত্যাকারী এখনো চাকরি করছে। আমরা বিচার চাই।”
 

সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী, শহীদ সৈকতের বোন বলেন, “জুলাই সনদ দ্রুত প্রকাশ করুন, আমরা বিচার শেষ হতে দেখতে চাই।”
 

ভলকার তুর্ক, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার, ভিডিও বার্তায় অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।

 

অনুষ্ঠানের শেষাংশে ড. ইউনূস বলেন, “জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে — সৎ, শক্তিশালী ও জনঅংশগ্রহণভিত্তিক রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করা। ন্যায়বিচার ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।”


ড. ইউনূসের বক্তব্যে একটি বার্তা স্পষ্ট — “সংস্কার না করলে, স্বৈরাচার ফিরেই আসবে।”
নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য ন্যায়বিচার, জাতীয় ঐকমত্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি অপরিহার্য।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫