ভারত থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে চীনে, বলছে ভারতীয় গণমাধ্যম

ভারতে কার্যরত চীনা বিভিন্ন কোম্পানি চীনে অর্থ পাচার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, এসব কোম্পানি ভারতে নানা ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত, অনেক কোম্পানি আবার বৈধভাবেও ব্যবসা করছে।
সাম্প্রতিক এক ঘটনায় দেখা গেছে, বেঙ্গালুরুভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক স্টার্টআপ শতভাগ চীনা মালিকানাধীন এক কোম্পানি ভারত থেকে চীনে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এই অবৈধ লেনদেন নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, পিজিয়ন এডুকেশন টেকনোলজির মালিকানাধীন শিক্ষাবিষয়ক স্টার্টআপ ওডা ক্লাস কোভিড প্রাদুর্ভাবের সময় বেশ প্রসার লাভ করে। তখন স্কুল–কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ওডা ক্লাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। প্রায় সাত লাখ শিক্ষার্থী তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়।
কিন্তু ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তে দেখা যায়, এই স্টার্টআপ পুরোপুরি চীনা নাগরিক লিউ কানের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। ভারতীয় পরিচালক একজন আছেন, কিন্তু তিনি ঢাল–তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সরদারের মতো, ক্ষমতাহীন। বিপণন ব্যয়ের নামে এই কোম্পানি ৮২ কোটি রুপি চীনে পাঠিয়েছে।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, সম্প্রতি জালিয়াতির ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ও অ্যাপের বাড়বাড়ন্তের কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে, বিশেষ করে অর্থ প্রেরণের বিভিন্ন অ্যাপের কারণে তা আরও সহজ হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জালিয়াতরা অ্যাপ ও ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার সুযোগ নিচ্ছেন। জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে বিনিয়োগ, ক্ষুদ্রঋণ, চাকরি ও জুয়া। সাধারণত ভারতে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে এসব প্রতারণামূলক অ্যাপ কাজ করে। চীনারা এসব কোম্পানিতে ভারতীয় পরিচালকদের নিয়োগ দেন ঠিক, কিন্তু তাঁদের ভূমিকা পুতুলের মতো; অথবা চীনারা চুরি করে তথ্য ব্যবহার করেন। এসব অ্যাপ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মানুষকে প্রলুব্ধ করে, মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে ঋণ ও বিনিয়োগের ওপর উল্লেখযোগ্য মুনাফার প্রলোভন দেখায়।
এরপর গ্রাহক যখন সে ধরনের অ্যাপ ডাউনলোড করে, তখনই শুরু হয় সমস্যা। সেই অ্যাপ থেকে গ্রাহকের সব তথ্য হাতিয়ে নেন জালিয়াতরা। শুরুতে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করতে বিনিয়োগের ওপর মুনাফা বা তাৎক্ষণিকভাবে ঋণের অঙ্ক স্থানান্তর করে মানুষের আস্থা অর্জন করেন তাঁরা। মানুষের কাছ থেকে বিনিয়োগ হিসেবে বড় অঙ্ক হাতিয়ে নেওয়ার পর হঠাৎ এসব অ্যাপ হাওয়া হয়ে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋণ দেওয়া অ্যাপগুলো অনেক সময় চাঁদাবাজির কৌশল ব্যবহার করে। যেমন ঋণগ্রহীতাদের ভুয়া নগ্ন ছবি তৈরি করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। এভাবে অনেকের কাছ থেকে তারা বিপুল অর্থ আদায় করে।
অভিযোগ আছে, এসব অ্যাপ কোম্পানি ভারতীয় নাগরিকদের ভুয়া নথিপত্র ব্যবহার করে। এ ছাড়া ভারতের অনেক হিসাবরক্ষণ ফার্ম এসব চীনা জালিয়াতদের সাহায্য করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এসবের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে আরও বলা হয়েছে, ভারতের আয়কর বিভাগ চীনা নাগরিক লুও সাংয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। সন্দেহ, তিনি এক হাজার কোটি রুপির হাওলা র্যাকেটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেটা হলো, ভারতে জালিয়াতরা যে অর্থ উপার্জন করেছেন, তা শেল কোম্পানির মাধ্যমে চীনে পাচার করা হচ্ছে।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, লুও সাংকে দিল্লি পুলিশ তারও দুই বছর আগে গোয়েন্দাগিরি ও অন্যান্য অপরাধে গ্রেপ্তার করেছিল। অভিযোগ ছিল, তিনি অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে মণিপুরি এক নারীকে বিয়ে করে ভারতীয় পাসপোর্টও পেয়েছিলেন।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫