দিনদুপুরে চিলমারী-রৌমারী সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে ডাকাত, নিরুপায় বলছে পুলিশ 

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:৫৯ অপরাহ্ণ   |   ২৫৮ বার পঠিত
দিনদুপুরে চিলমারী-রৌমারী সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে ডাকাত, নিরুপায় বলছে পুলিশ 

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

দুই দশকের বেশি সময় পর কুড়িগ্রামের চিলমারী-রাজীবপুর নৌপথে ব্রহ্মপুত্র নদে ডাকাতের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দুবার ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেই নৌ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের। ডাকাতির ঘটনায় প্রতিরোধমূলক কিংবা আইনি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় এই নৌপথে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

 


 

এ অবস্থায় জনবল সংকটকে দায়ী করে নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজেদের নিরুপায় বলছে নৌ পুলিশ। তাদের দাবি, তুলনামূলক কম গুরুত্ব পাওয়া দেশের এই নৌপথের নিরাপত্তায় জনবল বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই।
 

গত ২৯ জানুয়ারি দুপুরে চিলমারী-রাজিবপুর নৌপথে চিলমারী ইউনিয়নের কড়াইবরিশাল এলাকার পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদে একটি যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই নৌকার যাত্রীরা জানান, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ ১১ জনের ডাকাত দল যাত্রীবাহী নৌকা থামিয়ে সব কিছু লুটে নিয়ে সবার সামনে দিয়ে চলে যায়।
 

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর রৌমারী-চিলমারী নৌপথে ইজতেমাগামী যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই নৌপথের অষ্টমীরচর ইউনিয়নের দুইশ বিঘার চরের কাছে ১৬-১৭ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল ডাকাতি করে নির্বিঘ্নে চলে যায়। দুটি ঘটনায় কোনও মামলা কিংবা কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
 

তার আগে ২০০০ সালে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। তারপর এই দুটি ঘটনা ঘটলো। ১১ থেকে ১৪ কিলোমিটার নৌপথে ডাকাতির ঘটনায় নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন যাত্রীরা। নৌপথটি চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আওতাধীন হলেও যাত্রীদের নিরাপত্তায় কোনও উদ্যোগ নেই তাদের। এমনকি দুটি ঘটনায় কোনও মামলা কিংবা জিডি হয়নি। যদিও মামলা না হওয়ার জন্য যাত্রীদের অনাগ্রহকে দায়ী করেছে চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি।
 

ইজারাদার ও যাত্রীদের মাঝে শঙ্কা:
এক মাসের ব্যবধানে দুটি ডাকাতির ঘটনায় নৌপথের যাত্রীদের মাঝে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। নৌপথের বিকল্প না থাকায় জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।

 

গত বুধবার ডাকাতির শিকার নৌকার যাত্রী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘১১ জনের ডাকাত দলের বেশিরভাগের হাতে বন্দুক ছিল। সবার মুখ ঢাকা ছিল। কাউকে চেনা যায়নি। ডিঙি নৌকায় করে এসে আক্রমণ করে তারা সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। অস্ত্রের মুখে নারী-পুরুষ সব যাত্রী অসহায় ছিলেন।’
 

শুধু যাত্রীরা নন, ডাকাতির ঘটনায় ঘাট ইজারাদারও অসহায় হয়ে পড়েছেন। নৌপথের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য তারা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। চিলমারী নৌঘাটে কথা হয় নৌকার যাত্রী রুমি আক্তার ও রুজি বেগমের সঙ্গে। ডাকাতির খবরে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানান তারা।

  
রুমি আক্তার বলেন, ‘আমরা নিয়মিত নৌকায় যাতায়াত করি। নৌকায় ডাকাতির খবরে আতঙ্কে আছি। ডাকাতির কথা শুনলে বুক কেঁপে ওঠে। এই যে এখন রৌমারী যাচ্ছি, খুব ভয়ে পারাপার হচ্ছি।’

 

রুজি বেগম বলেন, ‘এই নদীতে ডাকাতির ঘটনা আগে ছিল না। কিন্তু এখন কী শুরু হলো। দিনের বেলাতেই ডাকাতরা হামলা করতেছে। আমাদের নৌকাতেও যে ডাকাত পড়বে না, তার কোনও ঠিক নাই। আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে?’
 

রফিকুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘নদীতে নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার। সব সময় আতঙ্কে থাকি, কখন ডাকাতি হয়।’
 

রমনা ঘাট ইজারাদারের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর বলেন, ‘রাজিবপুর যেতে যে জায়গাটিতে ডাকাতি হয়েছে, সেটি বরাবরই ফাঁকা থাকে। কড়াইবরিশাল থেকে নালতেখাতা পর্যন্ত জায়গাটা ঝুঁকিপূর্ণ। এই জায়গাগুলোতে ডাকাতদের আস্তানা। সম্ভাব্য ওই জায়গাতেই ডাকাতি হয়। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।’

 
ডাকাতির ঘটনায় মামলা নেই:
দুটি ডাকাতির ঘটনায় একটিতেও কোনও মামলা কিংবা জিডি হয়নি। হয়রানির ভয় আর প্রতিকার না পাওয়ায় যাত্রীরাও মামলা করতে চান না। যাত্রীদের অনাগ্রহের সুযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা কিংবা জিডি করেনি।

 

রৌমারী নৌপথে ডাকাতির শিকার নৌকার মাঝি সবুর বলেন, ‘এর আগে ২০০০ সালে ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশকে অভিযোগ দিলেও কোনও ফল পাওয়া যায় নাই। শুধু শুধু কোর্টে গিয়া উল্টা আমরা হয়রানি হইছি। এজন্য আর পুলিশে অভিযোগ দিই নাই।’ একই কারণ জানিয়েছেন গত বুধবার রাজিবপুর নৌপথে ডাকাতির শিকার নৌকার যাত্রী মঞ্জুরুল ও রফিকুল।
 

মামলা না হওয়ার বিষয়ে চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সেলিম সরকার বলেন, ‘ডাকাতির ঘটনায় কোনও যাত্রী মামলা করেননি। ফলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। কোনও জিডিও নথিভুক্ত করা হয়নি।’
 

নিরুপায় পুলিশ:
চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর নৌপথে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় নিরুপায় বোধ করছে নৌ পুলিশ। এজন্য জনবল সংকটকে দায়ী করছেন তারা।

 

এএসআই সেলিম সরকার বলেন, ‘আমাদের ফাঁড়িতে ছয় জন সদস্য। এই জনবল নিয়ে নদীতে টহল দেওয়া ও ফাঁড়ি পাহারা দিতে হচ্ছে।’
 

রাজশাহী নৌ পুলিশের আওতাধীন এই নৌপথে ডাকাতি ও নিরাপত্তা শঙ্কা নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার সাদিকুর রহমান বলেন, ‘চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। যাত্রীরা মামলা না করায় আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু করতে পারছি না। এই অঞ্চলটিতে নৌ পুলিশের জনবলও কম। এর মধ্যে চিলমারী ফাঁড়িতে আরও কম। আমরা জনবল বাড়ানোর জন্য বারবার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় আমরা নিরুপায়।’