|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০২:০২ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৪ জুলাই ২০২৩ ০১:১৭ অপরাহ্ণ

ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার শস্য চুক্তির মেয়াদ শেষ


ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার শস্য চুক্তির মেয়াদ শেষ


উক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার শস্য চুক্তির মেয়াদ ছিল ২২শে জুলাই ২০২২ থেকে ১৭ই জুলাই ২০২৩। নবায়ন না হওয়ায় চুক্তির জীবনকালটি ছোট। চুক্তির বেশকিছু ত্রুটিও আছে। কিন্তু এটাই ছিল রাশিয়ার হামলার অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে একমাত্র কূটনৈতিক আলো। খবর বিবিসি। 

চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন কৃষ্ণ সাগর ব্যবহার করে সারা বিশ্বে নিজেদের শস্য রপ্তানি করতো। স্বাভাবিকের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ কম হলেও তিন কোটি ৩০ লাখ টন শস্য রপ্তানি পরিমাণে কম নয়। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে এর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নৌ প্রতিরোধ আর দীর্ঘ তল্লাশি চালানোর নামে পথের গতি ধীর করার অভিযোগ আগেই ছিল। আর শেষমেশ চুক্তিটি বাতিলই করা হলো।


গত সপ্তাহে মস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে শস্য চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। রাশিয়া এরপর বন্দরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো শুরু করে যদিও এরআগে দেশটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে বন্দরে হামলা চালানো হবে না।

ধ্বংসকৃত স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী কোম্পানি কেরনেল এর একটি শস্য টার্মিনাল। কর্মকর্তারা বলেন, গত সপ্তাহে ৬০ হাজার টন শস্য ধ্বংস হয়েছে।

‘ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথম দুই তিন মাস আমরা রপ্তানি বন্ধ রেখেছিলাম,’ বলেন কেরনেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়েভহেন ওসিপভ।‘তেল ও শস্যের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল, এবং আপনি দেখছেন যে এখন আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।’


বৈশ্বিক শস্যের বাজার এখনো পর্যন্ত স্থিতিশীল রয়েছে বলে মনে হলেও রাশিয়া চুক্তি প্রত্যাহার করার এক দিনের মধ্যে শস্যের দাম আট শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল, যা গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে একদিনে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ছিল।

ওই এলাকায় কমপক্ষে তিনটি বন্দর এলাকার স্থাপনায় কোনো ধরণের হামলা না চালানোর বিষয়ে রাজি হয়েছিল ক্রেমলিন, কিন্তু সেই কূটনৈতিক রক্ষাকবজ এখন আর নেই।

ধ্বংসপ্রাপ্ত বন্দর, কৃষ্ণ সাগরে ঐক্যমতের ভিত্তিকে কোন করিডর না থাকা এবং উপকূলের বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার দখলে থাকার কারণে ওসিমভ মনে করছেন যে, ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির সক্ষমতা আরও ৫০ শতাংশ কমে যাবে।

‘এটা আমাদের কৃষকদের জন্য বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ, কারণ তাদেরকে শস্য অন্তত ২০ শতাংশ কম দামে বিক্রি করতে হবে,’ বলেন ওসিমভ। তিনি মনে করেন ভবিষ্যতে জমিতে কাজ করতে মানুষ কম আগ্রহী হবে।


শস্য চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার প্রভাব ওডেসা বন্দর ছাপিয়ে আরো বিস্তৃত হবে। শহরের মেয়র গেনাডি ত্রুখানভ মনে করেন, মস্কো দেখাতে চায় যে তাদের ছাড়া কোন কিছু রপ্তানি করা সম্ভব নয় এবং সেটা ঠিকও বটে।

‘সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে তারা তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য নিরাপরাধ মানুষের উপর আক্রমণ করেছে,’ তিনি বলেন।

কেন্দ্রীয় পলতাভা এলাকায় ৪০ মিটার উঁচু শস্যের গুদামের ওপর দাঁড়ালে ইউক্রেনের শস্য উৎপাদনের সক্ষমতার মাত্রা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না।


যে প্ল্যান্টটিতে বিবিসির দলটি গিয়েছিল সেটি এক লাখ ২০ হাজার টন শস্য মজুদ রাখতে পারে। এটি এখন এক তৃতীয়াংশ পূর্ণ এবং কৃষ্ণ সাগর দিয়ে যখন ইউক্রেন শস্য রপ্তানি করতে পারবে না তখন এটি আরও পূর্ণ হতে থাকবে।

এই প্ল্যানটির চারপাশে সীমাহীন কৃষি জমি বিস্তৃত। এটা এমন একটি দেশ যারা চাইলেই হঠাৎ করে শস্য উৎপাদন বন্ধ রাখতে পারে না। এই শস্য কোথাও না কোথাও রপ্তানি করতেই হবে- অন্তত এখনো পর্যন্ত সেটাই আশা।

‘আমরা অনুভব করি যে, যতটা সম্ভব শস্য উৎপাদন করা উচিত,’ একটি পাইপের মধ্যে নমুনা ঢালতে ঢালতে বলছিলেন ইউলিয়া, যিনি কেরনেল কোম্পানিতে একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন।

শস্য চুক্তির আগে, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষ অভূক্ত থাকার ঝুঁকিতে ছিল কারণ ইউক্রেন রপ্তানি করতে পারছিলো না। ১২ মাস পরে সেই ঝুঁকি আবারও ফিরে এসেছে।


‘রাশিয়ানরা হয়তো বোঝে না যে ক্ষুধা কী,’ বলেন ইউলিয়া। ‘মানুষ না খেয়ে আছে, বড় ধরণের মজুদ পড়ে আছে, কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই তারা সেটির নাগাল পাচ্ছে না।’

রাশিয়া কী বলছে?

মস্কো এর আগে হুমকি দিয়েছিলো যে তারা এই চুক্তি থেকে বের হয়ে যাবে। কারণ হিসেবে তারা বলেছিলো যে তাদের নিজেদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ওপর অত্যাধিক শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

তারা চায়, তাদের একটি প্রধান ব্যাংককে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম বা অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থায় অন্তর্ভূক্ত করা হোক, রাশিয়ার সার কোম্পানিগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক এবং বিদেশি বন্দরে রুশ জাহাজ পূর্ণ প্রবেশাধিকার পাক ও সেগুলোর বীমা নিশ্চয়তা দেওয়া হোক।


রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এসব দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে, যা আসলে এই মূহুর্তে কল্পনাই করা যাচ্ছে না।

গত জুলাইয়ে ক্রেমলিন এই সমস্যার সমাধানের অংশ হতে আগ্রহী ছিল বলে মনে হয়েছিল, যখন এটা প্রতীয়মান হয়েছিল যে ইউক্রেনে সরাসরি আক্রমণের কারণেই খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল।

যুদ্ধক্ষেত্রের হতাশা সেই অবস্থানকে পরিবর্তন করেছে বলে মনে হচ্ছে। খুব একটা প্রভাব না থাকলেও জাতিসংঘের পাশাপাশি এই শস্য চুক্তির প্রধান একজন মধ্যস্থতাকারী তুরস্ক বলছে যে, এটি আবার চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫