সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগপ্রত্যাশীদের আন্দোলন থেকে ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আটককৃতদের মধ্যে সাতজন পুরুষ ও সাতজন নারী রয়েছেন। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে টানা অষ্টম দিনের মতো শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা রাস্তায় অবস্থান নিলে সায়েন্সল্যাব থেকে মৎস্যভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর দেড়টার দিকে প্রায় শতাধিক শিক্ষক দ্রুত নিয়োগের দাবিতে রাস্তায় নামেন। পুলিশ দুপুর আড়াইটার পর তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করা হয় এবং জলকামানের পানি ছিটানো হয়। একপর্যায়ে তারা শাহবাগ মোড় থেকে পিছু হটতে বাধ্য হন এবং পরে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন।
সকাল থেকেই শাহবাগে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষকরা। অনেকেই কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনে অংশ নেন। রাশেদা বেগম নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, “সরকার আমাদের চাকরি দিয়েও কেড়ে নিয়েছে। আমরা রাস্তায় নেমেছি, আমাদের চাকরি ফিরিয়ে না দিলে সন্তানদের নিয়েই শহীদ হব।”
হাইকোর্টের রায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগপত্র বাতিল করা হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এক আদেশে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে উত্তীর্ণ ছয় হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগপত্র বাতিল করা হয়। এর আগে, ১৯ নভেম্বর একই নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
গত ৩১ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ৫৩১ জন। তবে আদালতের আদেশের ভিত্তিতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।
২০২৩ সালের ২৮ মে হাইকোর্ট ছয় মাসের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠলে আদালত বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।
এই প্রেক্ষাপটে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তাদের বাতিল হওয়া নিয়োগ পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।