|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৩ আগu ২০২৫ ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২২ আগu ২০২৫ ০৯:৩০ অপরাহ্ণ

কুমিল্লায় গ্রাহকের ২০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘দানিক’


কুমিল্লায় গ্রাহকের ২০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘দানিক’


মো: কাউছার সরকার,বিশেষ প্রতিনিধি (কুমিল্লা):-

 

 

কুমিল্লার মুরাদনগরে দরিদ্র নিরসন ও কর্মসংস্থান (দানিক) নামের একটি বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার ধামঘর ইউপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা এ অভিযোগ প্রকাশ করেন।


ভুক্তভোগীদের অভিযোগ

গ্রাহকদের দাবি, দানিকের পরিচালকরা দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশের প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে টাকা ফেরত না দিয়ে অফিসের সাইনবোর্ড খুলে গা-ঢাকা দেন।

  • দেবীদ্বারের গজারিয়া গ্রামের শাহিনা আক্তার জানান, ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট ৫ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন মাসে ১০ হাজার টাকা লভ্যাংশের শর্তে। কিন্তু এক টাকাও ফেরত পাননি।

  • মুরাদনগরের রেহানা বেগম বলেন, ২০১৪ সালে ৫ বছরের জন্য ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন দ্বিগুণ পাওয়ার আশায়। কিন্তু ১০ বছর পরেও মূলধন ফেরত পাননি।

  • কামাল হোসেন ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, তার পরিবারের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে দানিক।

এ ছাড়াও আরও অনেক নারী-পুরুষ একই অভিযোগ তুলেছেন।


বিএনপি নেতার বক্তব্য

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক আবুল কালাম আজাদ বলেন,
“দানিকের পরিচালকরা গ্রাহকের ভয়ে এলাকায় আসতেন না। আমি নিজ উদ্যোগে তাদের গ্রাহকদের সামনে হাজির করি এবং টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতিতে এলাকায় থাকার সুযোগ দিই। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে উল্টো আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

তিনি আরও দাবি করেন, দানিক থেকে তিনি কোনো ঋণ নেননি এবং প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততাও নেই।


ভেতরের কাহিনী

এক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরিচালকদের বিলাসী জীবনযাপনই পতনের মূল কারণ। প্রতিদিন কুমিল্লার ভিআইপি রেস্তোরাঁ থেকে নাস্তা আনা হত, বেতন-ভাতা ছিল অস্বাভাবিক। মৎস্য, পোলট্রি ও পরিবহন খাতে লোকসান, জমি কেনায় আটকে যাওয়া বিপুল অর্থ—এসব কারণে ২০১৫ সাল থেকেই গ্রাহকের টাকা ফেরত বন্ধ হয়ে যায়।


পরিচালকদের বক্তব্য

দানিকের পরিচালক পর্ষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম ভুলু জানান,
২০১০ সালে সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে। একসময় হাজারের বেশি গ্রাহকের টাকা নিয়ে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে আর্থিক সংকটে পড়ে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন খোকন, সভাপতি সাদেক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক মাস্টারসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।


প্রশাসনের অবস্থান

মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন,
“টাকা আত্মসাতের বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


সমাবেশ ও মানববন্ধন

এর আগে গত বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে মুরাদনগরের পরমতলা ইদ্রিসিয়া ফাজেল মাদ্রাসা মাঠে ভুক্তভোগীরা এক সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা প্রশাসনের কাছে টাকা ফেরতের দাবি জানান।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫