আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বহুদূর থেকে দেখলে মনে হবে, বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের এ বুঝি কোনো অজপাড়াগাঁ। জরাজীর্ণ একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপারের দৃশ্যে যে কারও এ ভ্রম হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এটা কোনো পাড়াগাঁ নয়, পাঁচটি ইউনিয়ন থেকে উপজেলা শহরে আসার প্রতিদিনকার দৃশ্য। লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। এই দৃশ্য কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর।
স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি পাঁচ ইউনিয়নের পথচারীর এই বেরুবাড়ীর মানিকের ঘাটে। উপজেলায় বয়ে যাওয়া দুধকুমর নদের ওপারে পাঁচটি ইউনিয়ন কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাস, বামনডাংগা, ও বেরুবাড়ীর এ শাখাস্থলে আজও নির্মাণ করা হয়নি বহুল আকাঙ্খিত সেতু। ফলে শ্রমজীবী, পেশাজীবি, ছাত্র-ছাত্রী ও অসুস্থ রোগী ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন প্রতিদিন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রবাহিত দুধকুমর নদের শাখা নদীতে সৃষ্ট এ মানিকের ঘাট। পানির প্রবাহ না থাকায় বর্তমানে ঘাটটি স্রোতহীন একটি ছড়ায় পরিনত হয়েছে। ওই ছড়াটি বেরুবাড়ীসহ উপজেলার কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাস ও বামনডাংগা ইউনিয়নকে পৃথক করে রেখেছে।
এপারে বেরুবাড়ীর কিছু অংশ ও দুই মাইল দূরেই উপজেলা শহর অবস্থিত। আর ওপারে যোগাযোগ বিছিন্ন পাঁচটি ইউনিয়নবাসী। তাঁদের শহরে যোগাযোগ সহজতর ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এই দুই অংশে সংযোগ স্থাপনে এই একটি বাঁশের সাঁকো। নেই কোনো কালভার্ট অথবা আর ভিন্ন কোনো রাস্তাও। তাই দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জীর্ণ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে পাঁচ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ এছাড়াও প্রায় সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের যাতায়াত এই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়েই।
এলাকাবাসী জানান, সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর ওপর দিয়ে কোনো ধরনের যান চলাচল করতে না পারায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরাও তাদের মালামাল সরবরাহে বিপাকে পড়েন। বিশেষ করে কৃষকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ফসল কাঁটার মৌসুমে।
স্থানীয় কৃষক আলম বলেন, ধান কাঁটি মাথাত করি পানি ভাংগী উবি নিয়্যা আসা যে কি কষ্ট হয়, তা আর না কই বাহে। খাওয়া নাগে তায় কষ্ট হলেও আবাদ করি। একটা বিরিজের অভাবে হামার দুক্ষের শ্যাষ নাই বাহে। চরাঞ্চলের জেলাল আহমেদ রানা বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এ পথেই শহরে আসা যাওয়া করছি। বর্ষা মৌসুমে কলা গাছের ভেলা অথবা নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে জরাজীর্ণ এ বাঁশের সাঁকোই আমাদের পারাপারের একমাত্র ভরসা।
এতো বছরেও সেতু না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে বেরুবাড়ী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান বলেন, অসংখ্যবার আবেদন করার পরও এখানে ব্রিজ নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ। নিরুপায় হয়ে প্রতি বছরই এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে নিজের পকেটের টাকায় সাঁকোটি তৈরি করে। প্রত্যেকবার বাঁশের সাঁকো তৈরিতে প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয় হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে নাগেশ্বরী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আসিফ ইকবাল রাজিব জানান, বেরুবাড়ী মানিকের ঘাটের সড়ক এবং সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্তৃপক্ষের কাছে সেতুটি নির্মাণে আবেদন করা হয়েছিল কিন্তু বরাদ্দ মেলেনি। তবে কয়েক দফায় সেতু নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্টও করা হয়ে গেছে। সেতু নির্মানের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।