মোঃ শফিকুল ইসলাম (,চারঘাট রাজশাহী)
প্রশাসনের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ-অভিযোগ এলাকাবাসীর.......
রাজশাহীর অন্য উপজেলায় যখন অবৈধ ভাবে পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে চলছে জিরো টলারেন্স নীতি তখন চারঘাট উপজেলায় তার ব্যাতিক্রম। কৌশল পরিবর্তন করে অভিনব কায়দায় রাতের আধারে চারঘাটে স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে বেপরোয়া ভাবে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। সংস্কারের নামে পুকুর খননকাজ চলে আসলেও প্রশাসনের নেই কোন নজরদারী। এতে প্রশাসনের ভুমিকা সাধারন মানুষের কাছে এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে কোন ধরণের তদন্ত ছাড়াই ইতিপুর্বে প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ ভাবে খনন করা পুকুরকে পুরাতন পুকুর দেখিয়ে তা সংস্কারের অনুমতি দিচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন। এসব অবৈধ ভাবে পুকর খনন কাজ বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পাচ্ছেন না স্থানীয় কৃষকরা।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে চারঘাটে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে আমের বাগানসহ বিভিন্ন ধরণের ফলের বাগান উজার করে চলছে পুকুর খনন। বাগান ছাড়াও তিন ফসলী জমিতে একের পর এক পুকুর খনন কাজ চলে আসলেও চোখে কালো চশমা পড়ে থাকছেন স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ চারঘাটের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ অবৈধ পুকর খনন বন্ধে এবং কৃষি জমি রক্ষার্থে স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিক ভাবে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও বন্ধ হয়নি পুকুর খনন। অবৈধ পুকুর খনন চক্রের সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আতাত করে প্রকাশ্যে চালাচ্ছেন তাদের অবৈধ কর্মকান্ড। প্রশাসনের নেই কোন নজরদারী।
সরজমিনে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার ইউসুফপুর, শলুয়া, নিমপাড়া, ভায়ালক্ষিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে আম বাগানসহ বিভিন্ন ফলের বাগান উজার করে চলছে পুকুর খনন। আবার কোথাও কোথাও চলছে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন। এক সময় যে মাঠ জুড়ে ছিল সবুজের সমারোহ। আজ সেই মাঠে জুড়ে শুধু পুকুর আর পুকুর। এক সময় যেখানে ছিল বড় বড় আমের বাগানসহ বিভিন্ন ফলেরর বাগান, আজ সেই সব এলাকায় বাগান উজার করে চলছে পুকুর খনন।
জানা যায়, উপজেলার ইউসুফপুর এলাকায় প্রায় ১০ বিঘা তিন ফসলী জমিতে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করছেন আজাহার আলী। তার দাবি স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই চলছে পুকুর সংস্কার। নিমপাড়া ইউনিয়নের জাগীরপাড়ায় ইতিপুর্বে স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ ভাবে খনন করা ৭ বিঘা পুকুরকে পুরাতন পুকুর বলে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সংস্কারের অনুমতি নিলেও সেখানে ১৯ বিঘা জমিতে প্রকাশ্যে চলছে পুকুর খনন। এ পুকুর খনন কাজে রয়েছে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন,মাসুদ রানা ও নাসির উদ্দিন। অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের দাবি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সংস্কারের অনুমতি নিয়েই পুকুর সংস্কার কাজ করছেন। অথচ এলাকারবাসীর অভিযোগ পুকুর সংস্কারের নামে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর যেন পুরো মাঠ পুকুর সংস্কারে নেমেছেন। অপর দিকে শলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের অতি সন্ন্কিটে প্রায় ৮ বিঘা ফসলী জমিতে পুকুর খনন করছেন শামিউল ইসলাম নামের প্রভাবশালী এক ব্যাক্তি। এ ছাড়াও উপজেলার ফতেপুর বাগান কেটে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করছেন শফিকুল ইসলাম নামের আরেক ব্যাক্তি। উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের বালাদিয়াড় এলাকায় ১১ বিঘা তিন ফসলী জমিতে জমির খনন করছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাক্তি। কাউকে কোন ধরণের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে বেপরোয়া ভাবে খনন করছেন পুকুর খনন। ভায়ালক্ষিপুর এলাকায় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট পুকুর সংস্কারের নামে শত শত ট্রাক মাটি কেটে লালপুরের কয়েকটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি দিনে রাতে খনন করছেন পুকুর। উপজেলার এতো গুলো স্পটে অবৈধ পুকুর খনন কাজ অব্যাহত ভাবে চলে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন রয়েছেন উদাসিন।
বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আরিফ হোসেন বলেন, পুরাতন পুকুর সংস্কারের অনুমতি দেয়া হলেও কেউ যদি সংস্কারের নামে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়াও সংস্কারের নামে পুকুরের মাটি অন্যত্র বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি মাটি বিক্রি করে থাকে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা করা হবে। কোন অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে আপোষ নেই বলে দাবি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আরিফ হোসেন।