মহানবী (সা.)-এর তিন উপদেশ সুন্দর জীবন গঠনে

আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর কাছে এলো। অতঃপর সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে সংক্ষিপ্ত কিছু উপদেশ দেন। তিনি বললেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তখন সে নামাজকে জীবনের শেষ নামাজ মনে করবে, এমন কথা বলবে না যার জন্য আগামীতে ভুল স্বীকার করতে হবে, আর মানুষের কাছে যা আছে (সম্পদ) তা থেকে তুমি পুরোপুরি নিরাশ (মোহমুক্ত) হয়ে যাও।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৭১)
আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনের জীবন ও ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পরামর্শ দিয়েছেন। যার মধ্যে নামাজ মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধতা নিশ্চয়তা দেয়, কথাবার্তায় সংযম মানুষকে ব্যক্তিত্বহীনতার হাত থেকে রক্ষা করে এবং সম্পদের মোহ ত্যাগ মানুষের অপরাধ প্রবণতা কমায়। জীবনের শেষ নামাজ : রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিটি নামাজকে জীবনের শেষ নামাজ হিসেবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মূলত তিনি নামাজে সর্বাত্মক মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা নামাজ মানুষকে পাপমুক্ত করে এবং মানুষের ভেতর ঈমানের নুর বা জ্যোতি সৃষ্টি করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘আপনার কি ধারণা যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে সে এ নামাজের পর আর কখনো নামাজের সুযোগ পাবে না, তখন সে কিভাবে নামাজ আদায় করবে? সে চেষ্টা করবে যেন তাঁর নামাজ কবুল হয় এবং সে সর্বোচ্চ মনোযোগ ও যত্ন নিয়ে নামাজ আদায় করবে। নামাজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে।’ (শরহু জাওয়ামিউল আখবার : ৩/১৪৫)
বাক্য ব্যবহারে সংযম : বাক্য ব্যবহারে মানুষ অসংযত হলে তাকে লজ্জিত হতে হয়। বেশি বেশি কথা বলা, মন্তব্য করা এবং বুঝে-শুনে বাক্য ব্যবহার না করলে মানুষকে লজ্জিত হতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিক হাদিসে মানুষ বাক্য ব্যয়ে সংযত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় তার সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহ্বাকে বলে,
তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো। আমরা তো তোমার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাকো তাহলে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহলে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৪০৭)
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে মানুষ তার জন্য তৎপর প্রহরী তার কাছেই রয়েছে।’ (সুরা কাফ, আয়াত : ১৮)
অবৈধ সম্পদের মোহ ত্যাগ : সম্পদের মোহ মানুষকে অন্যায় ও অবিচারে উদ্বুদ্ধ করে। বিশেষ করে মানুষ অন্যের প্রাচুর্য দেখে ঈর্ষান্বিত হওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হবে।’ (সুরা তাকাসুর, আয়াত ১-২)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ তার জন্য যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। যে অর্থ জমায় ও তা গণনা করে রাখে। সে ধারণা করে যে তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে। কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামা নামক জাহান্নামে। (সুরা হুমাজা, আয়াত : ১-৪)
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫