বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ীই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে
প্রকাশকালঃ
২২ জুলাই ২০২৩ ০১:২৩ অপরাহ্ণ ১৮৫ বার পঠিত
বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ীই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা আবারও জানিয়ে দিলেন সরকারের তিন জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল করে সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপি ও তাদের ৩৬টি মিত্র দল এক দফার আন্দোলনে থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এই তিন নেতা সাফ জানিয়েছেন- সংবিধান থেকে তারা চুল পরিমাণও সরবেন না, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাও পদত্যাগ করবেন না।
গতকাল শুক্রবার পৃথক অনুষ্ঠানে নিজেদের এই অবস্থানের কথা আবারও জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের; আইনমন্ত্রী আনিসুল হক; দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের নির্বাচন হবে আমাদের নিয়মে, সংবিধানে যেভাবে লেখা আছে। এর বাইরে কারো চক্রান্তমূলক অভিলাষ বাস্তবায়ন হতে দেবে না আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, বিএনপির দাবি একটাই—শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনার পদত্যাগ মানে সংবিধানের চরম লঙ্ঘন। আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারি না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, আমাদের বিপরীতে যারা অবস্থান করছে তারা সামপ্রদায়িক অপশক্তি, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বন্ধু, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক। এই ষড়যন্ত্রকারী, এদের তৎপরতার কাছে সারেন্ডার করব? সারেন্ডার করে এ দেশের মাটি, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, স্বাধীনতা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনৈতিক বিজয়, উন্নয়ন অভিযাত্রা কী বিসর্জন দেব? তিনি বলেন, রাজনৈতিক অপশক্তির হোতা বিএনপি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে বিদেশিদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে। নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের জন্য বিএনপির দাবিকে ‘আবদার’ আখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এটা আর কখনোই ফিরবে না। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় খাড়েরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে। সেই মোতাবেক জাতীয় সংসদে আইন পাশ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে।
বিএনপির ‘অন্যায় দাবি’র কাছে সরকার মাথা নত করবে না উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এই দলের শেকড় অনেক গভীরে। ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপসহীন ছিলেন। কখনো পাকিস্তানিদের সঙ্গে আপস করেননি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কোনো অন্যায় আবদারের কাছে মাথা নত করেননি, করবেনও না। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের রেলগাড়িতে।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচন করতে চায় না। তারা চায় পেছনের দরজা দিয়ে কেউ তাদের ক্ষমতায় ঢুকিয়ে দিয়ে যাক। তিনি বলেন, আজ বড় বড় শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে। তাদের মোকাবিলা করতে হলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ অন্ধকার। বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশ আবার একটা নৈরাজ্যের দেশ হয়ে যাবে। আমরা আর অতীতে ফিরে যাবো না। আমরা উন্নয়নের রেললাইনে উঠে গেছি।
আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। সংবিধানের এক চুলও ব্যত্যয় হবে না। কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় যোগদানের আগে সেখানে সার্কিট হাউসে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক বিভিন্ন দেশে (যেমন জাপান, ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি) আগে থেকে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তারাই নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করে। একইভাবে বাংলাদেশেও বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে, আর সেই সরকারের প্রধান থাকবেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বিএনপি অনুসরণ করবে শুধু পাকিস্তানকে। কারণ, দলটির কাছে ঐ দেশই প্রিয়। এজন্য সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন- ‘পাকিস্তানই ভালো ছিল!’
হাছান মাহমদু আরো বলেন, বিএনপি এখন পা ভাঙা বাঘ, খাঁচায় বন্দি সিংহ—তাই গর্জন ছাড়া কিছুই করতে পারে না। তারা দেশে বিশৃঙ্খলা করলে কিংবা শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা করলে সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে।