মোবাইল ফোনের কলরেট এবং ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম কমানোর দাবি দীর্ঘদিনের থাকলেও, আবারও বাড়তে যাচ্ছে গ্রাহকদের খরচ। সরকার শিগগিরই মোবাইল সেবার ওপর অতিরিক্ত সম্পূরক কর আরোপ করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে একটি নতুন প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পাশাপাশি আরও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ের এবং দুটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এখন শুধু প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষা।
২০১৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল। বর্তমানে মোবাইলে ১০০ টাকার রিচার্জ করলে, গ্রাহককে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট এবং সারচার্জ বাবদ ২৮ টাকা ১০ পয়সা দিতে হয়। এছাড়া রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হয় ৬ টাকা ১০ পয়সা, এবং পরোক্ষ কর হিসেবে আরও ২০ টাকা ৪০ পয়সা কাটা পড়ে। সবমিলিয়ে, ১০০ টাকা রিচার্জে মোট ৫৪ টাকা ৬০ পয়সা কর বাবদ কাটা পড়ে।
এখন যদি সম্পূরক শুল্ক আরও ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়, তবে গ্রাহককে ১০০ টাকার রিচার্জে ৫৬ টাকা ৩০ পয়সা কর দিতে হবে। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ বাবদ কাটা যাবে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ, রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স বাবদ ৬ দশমিক ১ শতাংশ, এবং পরোক্ষ কর বাবদ ২০ দশমিক ৪ শতাংশ। এর ফলে, গ্রাহক ১০০ টাকার রিচার্জে মূলত মাত্র ৪৩ টাকা ৭০ পয়সা ব্যবহার করতে পারবেন।
মোবাইল ফোন সেবায় খরচ বাড়ানোর কারণে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা কমছে। অনেকেই ডাটা ব্যবহারের খরচ কমাচ্ছে, ফলে যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার বদলে দেশের মানুষ পিছিয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, নভেম্বর মাসে মুঠোফোনের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ, যা জুন মাসের তুলনায় ৭৩ লাখ কম। একইভাবে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৭ লাখ কমে ১৩ কোটি ২৮ লাখে নেমেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন আহমেদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা অনেক পিছিয়ে। অথচ ভ্যাটের হার বিশ্বের সর্বোচ্চ। দেশের ৪৮ শতাংশ মানুষ এখনও ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত, এমন পরিস্থিতিতে উচ্চহারে কর আরোপ করলে, তা নাগরিকদের ইন্টারনেট সেবা থেকে দূরে ঠেলে দেবে এবং বৈষম্য সৃষ্টি করবে।